ট্রেন না চললে আমাদের আয়-রোজগারও বন্ধ’

Slider বাংলার মুখোমুখি


‘আজকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঠিকমতো ১০০ টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। এখানে মূলত ট্রেনের যাত্রীদের ঘিরেই আমাদের ব্যবসা। সারাদিন অলস সময় পার করছি। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’-এভাবে দুর্ভোগের কথাগুলো বলছিলেন ফেনী রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী সাইমুন।

বাবুল নামে রেলওয়ে স্টেশনের এক কুলি বলেন, ২৫ বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চলছে। কাজ করলে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু আজ ট্রেন বন্ধ থাকায় কোনো পণ্য আসেনি। এতে এক টাকাও আয় নেই। এ পরিস্থিতি আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। সংশ্লিষ্টরা যদি দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন আমরা বেশি উপকৃত হবো।

শুধু সাইমুন কিংবা বাবুলই নন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ন্যায় বিপাকে পড়েছেন রেলওয়ে স্টেশন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণির কর্মজীবীরা। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে ফেনী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজিব নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশনে মানুষজনের আনাগোনা নেই। এ দোকানের আয় থেকেই বাসা ভাড়া, খাবারসহ সবকিছুর ব্যয় নির্বাহ করি। এভাবে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেলে জানি না কিভাবে চলব? স্টেশন বন্ধ মানে আমার মতো এখানকার প্রায় শতাধিক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়া।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে-বসে আছেন একদল যাযাবর মানুষ। অলস সময় পার করছেন স্টেশন কেন্দ্রিক গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য দিনের চেয়ে এদিন স্টেশনের চারপাশে দেখা গেছে ব্যতিক্রম পরিবেশ। চারদিকে বইছে সুনশান নিরবতা।

এদিকে সকাল থেকে রেলওয়ে স্টেশনে এসে ট্রেন বন্ধের কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, ট্রেন চলাচল বন্ধের ব্যাপারে মেসেজের মাধ্যমে অবগত করা হলেও তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

মাজহারুল হক নামে চট্টগ্রামগামী এক যাত্রী বলেন, অনলাইনে টিকেট কেটে স্টেশনে এসেছি। এখানে আসার পর ট্রেন চলাচল বন্ধের কথা জেনেছি। অন্তত একটি মেসেজ দিলে এ ভোগান্তি পোহাতে হতো না। বন্ধের বিষয়টি জানলে আগে থেকে সময় নিয়ে বের হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে যেতে পারতাম।

ফেনী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. হারুন বলেন, প্রতিদিন ফেনী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলে ট্রেন ছাড়বে। যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে স্টেশন এলাকায় নিয়মিত পুলিশ টহল দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। কর্মবিরতির অংশ হিসেবে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর শিডিউলে থাকা ট্রেনগুলোতে ওঠেননি রানিং স্টাফরা। ফলে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। এ কারণে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। রানিং স্টাফের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকার পদধারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *