প্রটোকলের দায়িত্বসহ অন্যান্য কাজে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এ অবস্থায় অপরিহার্য ক্ষেত্র ছাড়া প্রটোকল অথবা অন্য কাজে কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত না করার নির্দেশ দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এ আদেশ দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) পাঠানো হয়েছে। আদেশের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠপর্যায়ে কর্মরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), (অধিগ্রহণ), রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) ভূমি উন্নয়ন করসহ সরকারি রাজস্ব আদায় এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারা ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যাবলি যেমন- অধিগ্রহণ, খাসজমি ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, উচ্ছেদ কার্যক্রম, সার্টিফিকেট মামলা, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় এবং নামজারিসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে সর্বোপরি ডিজিটাইজড ভূমি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
মন্ত্রণালয়ের আওতায় ভূমি উন্নয়ন করসহ অন্যান্য রাজস্ব আদায়ের সময় অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে বাংলা বছরের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্রের পরিবর্তে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে আদেশে বলা হয়, রাজস্ব আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসকের অধীন রাজস্ব প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মচারীকে পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে রাজস্ব আদায়ের কাজে নিযুক্ত থাকা আবশ্যক।
আদেশে আরও বলা হয়, ভূমি উন্নয়ন করসহ সরকারের অন্যান্য রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বা (অধিগ্রহণ), রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারদেরকে (ভূমি) অপরিহার্য ক্ষেত্র ব্যতীত প্রটোকল অথবা অন্য কাজে সম্পৃক্ত না করা জন্য অনুরোধ করা হলো।
নাম প্রকাশ না করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এসব কর্মকর্তারা ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। এর মধ্যে ভূমি উন্নয়ন করসহ সরকারি রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রটোকলসহ অন্য অনেক কাজে তাদের সম্পৃক্ত করায় কর্মকর্তারা মূল কাজে ফোকাস করতে পারছেন না। এজন্য এসব কর্মকর্তাকে অপরিহার্য ক্ষেত্র ব্যতীত প্রটোকল অথবা অন্য কাজে সম্পৃক্ত না করার জন্য অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এটি ডিসি-ইউএনওসহ অন্যদেরকেও পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সফটওয়্যারের কারণে এমনিতেই ভূমি সেবার বিভিন্ন কাজে বিঘ্ন ঘটে। মানুষও অসুবিধার মধ্যে পড়েন। এখন যেন ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজগুলোতে ব্যাঘাত না ঘটে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, ব্যাঘাত ঘটলে ভূমি সংক্রান্ত রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে। আর আমাদের লক্ষ্য মানুষকে ভালোভাবে সেবা দেওয়া।’
এদিকে গত ২২ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রের নিয়ম মানার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে যথাসময়ে পালন করতে হবে। জনগণের জন্য জনসেবায় কাজ করতে হবে।
ভূমি উপদেষ্টার দায়িত্বে আলী ইমাম মজুমদার
ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার / ঢাকা পোস্ট
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে সর্বদা সচেতন থাকবেন। যে কোনো অযাচিত শক্তির বিরুদ্ধে নিশ্চিন্তে কাজ করুন, অযাচিত শক্তির বিরুদ্ধে আপনাদের প্রটেক্ট করার দায়িত্ব আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সময়ের পরিক্রমায় ভূমিসেবা ডিজিটাইজ হওয়া খুবই জরুরি। টেকসই ডিজিটাইজ ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন। ডিজিটাইজ সেবা প্রদানে ডিভাইসের পেছনে যে মানুষটি কাজ করবে তাকেও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণকে প্রকৃত সেবা দানের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের প্রতি জনগণের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করতে হবে।’