সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও আকর্ষণীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সাধারণত আশ্বিন মাসেই হয়ে থাকে এ পূজা। কিন্তু এবার হচ্ছে মলামাস বা কার্তিক মাসে। শাস্ত্রীয় ও তিথির কারণে গতবারের মতো এবারও তাই দুর্গাপূজার নবমী ও দশমী হচ্ছে একইদিন বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর)। সে হিসেবে প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে শুক্রবার (২৩ অক্টোবর)।
বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায়ই ভক্তদের অশ্রুতে মা দুর্গাকে জলে ভাসিয়ে শ্যামলীমা বসুন্ধরা থেকে পতিগৃহে কৈলাসে পাঠানোর রীতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু ভক্তদের কাছে এবার হার মানতে হচ্ছে মা দুর্গাকে।
কে চায় এমন ভক্তহৃদয়প্রাণ মাকে বিদায় জানাতে। ফের পূজা দিতে এক বছরের অপেক্ষা। তাই ভক্তরা তিথিকে পাশে ফেলে রেখে দুর্গতিনাশিনী মঙ্গলময় মা’কে বিদায় জানাবেন শুক্রবার। শুধু বাংলাদেশে নয়- ওপার বাংলায়ও শুক্রবার অসূর বিনাশী মা’কে বিদায় জানাবেন ভক্তরা।
বুধবার (২১ অক্টোবর) ছিল মহাষ্টমী। এদিন সকাল ১১টায় দেশের রামকৃষ্ণ মিশনগুলোতে হয় কুমারী পূজা। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে লক্ষ্মীবাজারের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স কিন্ডারগার্টেনের লোয়ার কেজির শিক্ষার্থী সাত বছরের প্রণিতা উষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবার কুমারী পূজার জন্য বেছে নেওয়া হয়।
সকালে প্রণিতাকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয় এবং ফুলের মালা, নানা অলঙ্কার ও প্রসাধনে নিপুণ সাজে সাজিয়ে পূজা দেওয়া হয়। পূজা শেষে প্রধান পূজারী আরতি দেন এবং তাকে প্রণাম করেন।
১৯০১ সালে দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে নয়জন কুমারীকে পূজা দেওয়ার মাধ্যমে কুমারীপূজার পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে।
পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এছাড়া, নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে। বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় হয় মা দূর্গার পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হয় বেলা ১টা ৩৬ মিনিটে আর শেষ হয় বেলা ২টা ২৪ মিনিটে। মধ্যাহ্নে ছিল প্রসাদ বিতরণ।
সন্ধ্যার পর সকল মন্দিরে শুরু হয় আরতি প্রতিযোগিতা। চলে অনেক রাত পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার তিথির প্রথমভাগে নবমী-সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা আরম্ভ হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নানা আচারের মধ্য দিয়ে মহানবমী পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। এরপরেই সকাল ৯-৫৭ মিনিটে দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন করার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোত্সবের আয়োজন। এটা শুধু তিথি অনুযায়ী। ঘটা করে বিজয়াদশমী অর্থাৎ প্রতিমা বিসর্জন হবে শুক্রবার সন্ধ্যার আগেই।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদোত্সব।