বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নতুন ঋণ অনুমোদন করেছে ইসলামী ব্যাংক। ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড’ নামের এক প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ব্যাংকটি। সম্প্রতি ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি বড় অঙ্কের এ ঋণ দেওয়ার অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন সংক্রান্ত নথিতে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকটি এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করা টাকায় চলছে ইসলামী ব্যাংক। চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের টাকাও দিতে পারছে না। অথচ নতুন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম শুরু করেছে, এটা দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ব্যাংকটি এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করা টাকায় চলছে ইসলামী ব্যাংক। চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের টাকাও দিতে পারছে না। অথচ নতুন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম শুরু করেছে, এটা দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা
এর আগে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পর নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকা বের করে নেয় এস আলম গ্রুপ। গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। শুধু টাকাই নেয়নি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল সেটিও ধ্বংস করে দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর কোনো নতুন ঋণ দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। অথচ সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নতুন করে ঋণ অনুমোদন দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ ঋণ অনুমোদন করেন বর্তমান পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল। এখানেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। প্রথমে প্রস্তাবিত ঋণের অঙ্ক ছিল ২২৫ কোটি টাকা। ঋণ অনুমোদন সভার শুরুর দিন সকালে একপ্রকার তড়িঘড়ি করে তার মৌখিক নির্দেশে ঋণের অঙ্ক বাড়িয়ে করা হয় ২৫০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণ খেলাপি এবং ১৮ কোটি টাকা অনাদায়ী থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর কোনো নতুন ঋণ দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। অথচ সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নতুন করে ঋণ অনুমোদন দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ ঋণ অনুমোদন করেন বর্তমান পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল। এখানেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। ঋণ দেওয়ার কথা ছিল মোট আমানতের ৯২ শতাংশ, অথচ ব্যাংকের এডিআর (ইসলামী ব্যাংকিং পরিভাষায় ঋণকে বিনিয়োগ ও এডিআরকে আইডিআর বলা হয়) ৯৩ শতাংশ, এখানে অফশোর ব্যাংকিং খাতের ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সেটি নিলে এডিআর ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এরপরও কীভাবে নতুন ঋণ অনুমোদন হয়, বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা।
ট্রু ফেব্রিকসের নামে ঋণ অনুমোদন প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মনিরুল মওলা কাছে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে এ বিষয় হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
ট্রু ফেব্রিকসের নামে ঋণ অনুমোদন প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মনিরুল মওলা কাছে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে এ বিষয় হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
একই বিষয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল কল রিসিভ করেননি। ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলও সাড়া দেননি।
একই বিষয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল কল রিসিভ করেননি
যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, সে প্রতিষ্ঠানকে নতুন ঋণ
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার আগে মো. আব্দুল জলিল এ ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে যোগ দেন এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে ২০১৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ইসলামী ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার গ্রাহক ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেডের ব্যাংকিং বিষয়ক পরামর্শক’ হিসেবে যোগ দেন। নিজের সাবেক কর্মস্থলের অনুকূলেই এ ঋণের অনুমোদন দেন আব্দুল জলিল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ বাশার।
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার আগে মো. আব্দুল জলিল এ ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে যোগ দেন এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে ২০১৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ইসলামী ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার গ্রাহক ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেডের ব্যাংকিং বিষয়ক পরামর্শক’ হিসেবে যোগ দেন। নিজের সাবেক কর্মস্থলের অনুকূলেই এ ঋণের অনুমোদন দেন আব্দুল জলিল
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ
পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে শুধু চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বার রাখার বিধান আছে। অন্য পরিচালকেরা এ সুবিধা পান না। তারা শুধু পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে যোগ দিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে আলাদা চেম্বার ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। যদিও চেম্বারের নামফলকে সভাকক্ষ লেখা আছে। এ ছাড়া ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজেও হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যেমন- পদোন্নতি, বদলি, ঋণ বিতরণ, অডিট রিপোর্ট তৈরিতে নির্দেশনা প্রদান অর্থাৎ ব্যাংকের যাবতীয় কাজে তিনি হস্তক্ষেপ করেন।