গাজীপুরে বৈষম্য বিরোধী মামলায় আসামী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ১০ বিএনপি নেতা

Slider বাংলার মুখোমুখি

গাজীপুর অফিস: আমার ১১ বছরের ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি শওকত চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যান বলেছেন, থানায় একটি জিডি করতে হবে। জিডি করলে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাওয়া যাবে, সরকারী সাহায্য পাওয়া যাবে। আমি এতে রাজি হলে কয়েকটি কাগজে আমার দস্তখত নেয় চেয়ারম্যান। পরে বিভিন্ন আসামী আমাকে ফোন করে বলে আমি নাকি মামলা করেছি। আমি কারো বিরুদ্ধে মামলা করিনি। নিরাপত্তার জন্য আমার ছেলেকেও বাড়িতে পাঠিয়ে দিছি। এখন কিভাবে ফয়সালা করব বুঝতেছি না, এই আবেদন বাদীর। আর এ্ই মামলা সহ বেশ কয়েকটি বৈষম্য বিরোধী মামলায় কাশিমপুরের আশপাশে টঙ্গী, আশুলিয়া সহ বেশ কিছু জায়গায় এখন পালিয়ে আছেন ১০ বিএনপি নেতা, ভুগছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে।

কথাগুলো বলেছেন, জিএমপির কাশিমপুর থানায় দায়েরকৃত বৈষম্য বিরোধী এক মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম।

জানা গেছে, বগুড়ার অধিবাসী বর্তমানে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তার ছেলে আহত হয়। এ ঘটনায় তিনি ১অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নাম্বার ০১)। মামলার এজাহারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান সহ ১০২ জনকে শনাক্ত ও ২/৩ শজনকে অজ্ঞাত নামা আসামী উল্লেখ করা হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে ১০জন বিএনপি নেতা আসামী রয়েছেন। আসামী হওয়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা হলেন, তারেক জিয়া মুক্তি পরিষদের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ মিয়া, গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুব আলম মহি, একই এলাকার গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য মোঃ রকিবুল ইসলাম রকি, বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ আসাদ মন্ডল, মহানগরীর ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক মোঃ ইউসুফ আলী খান, মহানগরীর ৩ নং ওয়াার্ড বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি হানিফ মোল্লা, মহানগরীর ৫ নং ওয়ার্ড যুবদলের মোঃ সোহেল ইসলাম, সাবেক ছাত্রদল নেতা মোঃ আয়নাল মিয়া তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে, সাবেক ছাত্রদল নেতা পারভেজ আহমেদ পবন।

মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম জানান,তিনি মামলার আসামীদের কাউকেই চিনেন না। বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকারের পরামর্শে তার সহযোগী সাইফুল ইসলামের কথায় তিনি একটি কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। প্রথমে বলা হয়েছিল,জিডি করলে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারী ভাতাসহ নানা সু্বধিা পাওয়া যাবে। তাই আমি নাম লিখে দিয়েছি। পরে জানলাম মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এখন নানা লোকে ফোন করে। তাই ছেলেকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি এটার ফসালা চাই।
কাশিমপুর এললাকার তুরাগ নদীর ওপাড়ে টঙ্গী এলাকায় পালিয়ে থাকা বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী বিএনপি নেতা আবু সাঈদ মিয়া বলেন, আমি রনির ভক্ত হওয়ায় শওকত সরকারের পিএস পরিচয়ে সাইফুল ইসলাম আমাকে সাতটি বৈষম্যবিরোধী মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আসামি করেছে। প্রত্যেকটি মামলা হওয়ার পর সাইফুল আমাকে ডিজিটাল মাধ্যমে ফোন করে শওকত সরকারের পক্ষে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। নতুন মামলার ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

৫ আগস্টের পর দায়ের হওয়া চারটি মিথ্যা মামলার আসামি গাজীপুর মহানগরীর ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুব আলম মহি জানান, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনিকে কাশিমপুর এলাকায় সভা করতে দেওয়ার কারণে সভাপতি শওকত সরকার আমাদের অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়। তার কথা অমান্য করে রনিকে সভা করতে দেওয়ায় আমাদের মোট ১১ জন বিএনপি নেতা কর্মীর নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমি শওকত সরকারের পিএসও নই।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, আমি এ ধরনের কোন মামলার ঘটনার সাথে যুক্ত নই। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে তিনি বলেন, আমি সাইফুল ইসলাম সরকারকে চিনি, তিনি মাঝেমধ্যে আমার কাছে আসেন। বৈষম্য বিরোধী মামলায় বিএনপির কেউ আসামী হয়েছে কি না আমি জানি না।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি, এ বিষয়ে খোঁজ নিবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *