চলতি মাসেই রায় ঘোষণা হতে পারে

Slider জাতীয় নারী ও শিশু

 

97680_f8

আগামী ২৫শে অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষ হলে চলতি মাসেই দেয়া হতে পারে আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায়। এ কারণে আজ সিলেটের আদালতে ‘আসামি পরীক্ষা’ করা হবে। সকালে একে একে সব আসামিকে আদালতে হাজির করা হবে। এরপর মামলার বিচারিক কার্যক্রমের জন্য কেবল একটি কার্যদিবস বাকি থাকবে। মামলা-সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিচারক চাইলে চলতি মাসেই আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করতে পারেন। সিলেটের রাজন খুনের বিচার দ্রুত বিচারেই দেয়া হবে- সরকারের মন্ত্রিপর্যায় থেকে এমন ঘোষণা করা হয়েছিল। ডিবি ইন্সপেক্টর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটি সিলেট মহানগর জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ওই আদালতেই মামলার চার্জগঠন করা হয়। মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধার আদালতেই শুরু হয় মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০ আসামির উপস্থিতিতে ১লা অক্টোবর রাজনের পিতা আজিজুর রহমান ও জালালাবাদ থানার বরখাস্তকৃত এসআই আমিনুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণপর্ব শুরু করা হয়। এরপর ৪ঠা অক্টোবর চার, ৭ই অক্টোবর চার, ৮ই অক্টোবর চার, ১১ই অক্টোবর তিন, ১২ই অক্টোবর চার ও ১৩ই অক্টোবর চার, ১৪ই অক্টোবর চার ও ১৫ই অক্টোবর ছয়জনসহ নির্ধারিত নয় দিবসে ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের এগারোতম দিনে রোববার আদালতে সাক্ষ্য দেন তদন্তকারী কর্মকর্তার সুরঞ্জিত তালুকদার। এদিকে, গত ১৫ই অক্টোবর সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় প্রধান আসামি কামরুলকে। ১৬ই অক্টোবর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। রোববার কামরুলের পক্ষের আইনজীবীরা সব সাক্ষীর বক্তব্য পুনঃশুনানির আবেদন করেন আদালতে। কিন্তু আদালত শুনানি শেষে তার সেই আবেদন নাকোচ করে দেন। এরপর আজ আসামি পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছে। আজ আদালতে আসামিদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মফুর আলী। তিনি জানিয়েছেন, আদালত আলোচিত এ হত্যা মামলাটি শুরু থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এ কারণে এ মামলায় ৩৬ সাক্ষী এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া সব আইনি প্রক্রিয়াও যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন, সরকার রাজন খুনের দ্রুত বিচারের কথা রেখেছে। এ মামলাটি চলতি মাসেই শেষ হতে পারে। ২৫ তারিখ যুক্তিতর্ক শেষ হলে কেবল রায় ঘোষণার বাকি থাকবে। তিনি বলেন, সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করেছে। একই সঙ্গে মামলাটি বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। এদিকে, মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট রাজনের পিতা আজিজুর রহমানও। তিনি জানিয়েছেন, তিনি রাজন খুনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। আর যেন কেউ রাজনের মতো নির্মম নির্যাতনে মারা না যায় বিচারের মাধ্যমে সেটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি। সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন খুনের ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ১৩ জন। এর মধ্যে ১১ জন মামলার বিচারিক কার্যক্রমের আওতায় এসেছে। এরা হলো কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিদ আলম, আলী হায়দার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, দুলাল আহমদ, নগরীর জালালাবাদ থানার পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর মিয়া, ফিরোজ মিয়া ও আছমত উল্লাও আয়াজ আলী। তাদের মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। শামীম ও পাভেলকে খুঁজছে পুলিশ: রাজন খুনের চার্জশিটভুক্ত আসামি শামীম ও পাভেল এখন বিচারিক আওতার বাইরে রয়েছে। এ কারণ, ঘটনার পর থেকে তারা দুজন পলাতক রয়েছে। গত ৮ই জুলাই সিলেটের টুকের বাজারে যখন রাজন খুনের ঘটনা ঘটে, তখন ওই দুজন নির্যাতনের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে অন্য আসামিরা। এ কারণে ঘটনার প্রথম পর্যায় থেকেই পুলিশ শামীম ও পাভেলকে খুঁজে ফিরছে। ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে ওই দুজনের মালামাল ক্রোক করা হয়েছে। শামীম প্রধান আসামি কামরুলের ছোট ভাই ও পাভেল তাদের আত্মীয়। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। কামরুলকে ফেরত আনার দিন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, শামীম ও পাভেলকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেনও জানিয়েছেন, শামীম ও পাভেলকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *