দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে জব্দ করা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ৩৪৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে রাষ্ট্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা। জব্দ করা এসব হিসাব সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের। দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে হিসাবগুলো জব্দ করা হয়।
সূত্র জানায়, জব্দ থাকা ৩৪৩টি হিসাবের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকির (ববি) অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এছাড়া আছে এস আলম, সামিট, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা, জেমকন, নাবিল গ্রুপ এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদসহ সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হিসাব।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার আমলের মন্ত্রী-এমপি, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির খবর বেরিয়ে আসে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এসব ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। এখন এসব ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার
সন্দেহজনক লেনদেনে হলেই ব্যবস্থা, জব্দ করা হবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
বিএফআইইউ’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত, পাচারের সঠিক তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় ও পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে যাওয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িত সবার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তবে তাদের ব্যবসার ক্ষতি করা হবে না।
অতীতে বাংলাদেশে অনেক ব্যবসার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দেড় হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করেছে সরকার। ৮ আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএফআইইউ, এনবিআর এবং দুদক যৌথভাবে ৩৪৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে
বছরে পাচার হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা
গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দুর্নীতি ও অর্থপাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী ১৫০ ব্যক্তির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
বিএফআইইউ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দেড় হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করেছে সরকার। ৮ আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএফআইইউ, এনবিআর এবং দুদক যৌথভাবে ৩৪৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। এসব অ্যাকাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ২২৫টি তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ২০টি কেসের অডিট রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগিরই বাকিগুলোর অডিট সম্পন্ন করে দুদক ও সিআইডিতে পাঠানো হবে।