রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি.: ঝাড়ু– বিক্রেতার পাশে দাড়িয়েছেন সৌদী প্রবাসী এনামুল হক মোল্লা। তাকে একটি গরু দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। ভূক্তভোগীর জাহাম্মদ আলীর গরু বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়ে ছিলেন বিএনপির নেতা। সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন। শনিবার রাতেই টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। এর আগে গ্রাম্য শালিশে এক হত দরিদ্র ঝাড়ু– বিক্রেতাকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করেন বিএনপি নেতা। ওই বৃদ্ধার এতিম নাতির এক মাত্র সম্বল একটি গাভী বিক্রিকের হাতিয়ে নেন কথিত জরিমানার টাকা। ঘটনা ঘটে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের গলদাপাড়া গ্রামে।
ভূক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ফকির(৬৫) ওই গ্রামের মৃত আলী আকবর ফকিরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ঝাড়– বিক্রেতা। অভিযুক্তরা হলেন কাওরাইদ ইউনিয়নের চার নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই শ্রমিকদল নেতা কামরুল ইসলাম,তাদের সহযোগী একই গ্রামের ইব্রাহীম,রাণা, রমজান-১, রমজান-২,ওসমান সহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি। একটি পরিবারের এমন নির্যাতনের খবর দেখে ওই পরিবারের পাশে দাড়ান সৌদী প্রবাসী মক্কা নগরীর মেসফালা শাখা বিএনপির সভাপতি মো. এমদাদুল হক মোল্লা।রবিবাদ দুপুরে ওই পরিবারের হস্তান্তর করেন একটি গাভী।
জানাযায়, ওই গ্রামের হতদরিদ্র ঝাড়ু– বিক্রেতা জাহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই কামরুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীরা একটি সাজানো অভিযোগে শালিশ করে। ওই শালিশে জাহাম্মদ আলীকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমান করা হয়। এতিম নাতির এক মাত্র গরু বিক্রি করে কথিত জরিমানার টাকা আদায় করেন বিএনরি নেতা ও তার সহযোগীরা। পরে ওই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করেনেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার দুপুরে শ্রীপুরে কর্মরত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ৪৩জন প্রতিনিধি হাজির হন জাহাম্মদ আলীর বাড়িতে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। রাতেই পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাতেই উপস্থিত হন জাহাম্মদ আলীরা বাড়িতে। তার হাতে তুলে দেন গরু বিক্রি করে হাতিয়ে নেয়া টাকা। এদিকে একটি দরিদ্র পরিবারের উপরে নির্যাতনের খবর শুনে পাশে দাড়ার সৌদী প্রবাসী মক্কা নগরীর মেসফালা শাখা বিএনপির সভাপতি মো. এনামুল হক মোল্লা। তিনি প্রবাসে থেকেই তার ছোটন ভাই মাজাহারুল ইমলামকে দিয়ে ওই পরিবারের কাছে একটি গাভী পাঠান।
ভূক্তভোগী জাহাম্মদ আলী বলেন, ওই নেতাদের হুমকী ধমকী আর নির্যাতনের ভয়ে কাউকে কিছু বরিনি। সাংবাদিকরা আসার পর সব পাল্টে যায়। রাতে পুলিশ আসে। স্থানীয় মেম্বার ও বিএনপির নেতা সামসুল হক রাতে বাড়িতে এসে গরুর ত্রিশ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে যান।
সৌদী প্রবাসী ব্যবসায়ী এনামুল হক মোল্লা মোঠো ফোনে জানান, সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি ওই দরিদ্র পরিবারের নির্যাতনের কথা। অসহায় পরিবারের নির্যাতনের বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করে। পরিবারটির পাশে দাড়াতে ওই পরিবারকে একটি গাভী দান করেছি।
স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার মো. মমিনুল কাদের বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা স্থানীয় গন্যমান্যদের নিয়ে ওই পরিবারের পাশে দাড়াই। গরুবিক্রি করে নেয়া টাকা উদ্ধারকরে জাহাম্মদ আলীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. এমদাদুল হক মন্ডল জানান, গরু বিক্রি করে নেয়া টাকা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ফেরত দেয়া হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, খবরপেয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়। এতে অভিযুক্তরা সটকে পড়ে। রাতেই ওই এতিমের গরু বিক্রি করে হাতানো টাকা পরিবারকে ফেরত দেয়া হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য গত ২৭অক্টোবর ভোর ছয়টার দিকে ওই গ্রামে আল আমীন ও তার প্রেমিকা স্মৃতিকে আটক করে স্থানীয় বিএনপি নেতা বাবলু সরকার ও তার সহযোগীরা। পরে ওই প্রেমিক জুটিকে দশহাজার টাকার দাবীতে জাহাম্মদ আলীর বাড়িতে রাখে। আল আমীন ওই টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। সে টাকা দায় চাপানো হয় জাহাম্মদ আলীর উপর। রাতে স্থানীয় তারকাটা বাজারে শালিশ বসান নেতারা। ওই শালিশে জাহাম্মদ আলীকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা আদায় করতে রাতেই ব্যপারী ডেকে এতিম রাকিবুলের গরু বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেন বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীরা।