দুই দিনের সফরে ঢাকায় ফলকার টুর্ক

Slider জাতীয়

দুই দি‌নের সফ‌রে ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রা‌তে ঢাকায় পৌঁছা‌লে টুর্ককে বিমানবন্দ‌রে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল‌য়ের জা‌তিসংঘ অনু‌বিভা‌গের মহাপ‌রিচালক ও মুখপাত্র তৌ‌ফিক হাসান।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জা‌নি‌য়ে‌ছেন, ফলকার টুর্কের দুই দি‌নের ঢাকা সফ‌রে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬ থেকে ৭ জন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে নির্বাচন, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা ইস্যু অগ্রাধিকার পা‌বে।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের এই সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং নির্বাচন ইস্যু গুরুত্ব পাবে। মানবাধিকার ইস্যুর মধ্যে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত রয়েছে। নিরাপত্তা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারে জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চায় অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসংঘও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু কোন ফরমেটে কীভাবে সহযোগিতা হতে পারে, তা টুর্কের ঢাকা সফরের আলোচনার টেবিলে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।

কূট‌নৈ‌তিক সূত্র আরও জানায়, মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং নির্বাচন ইস্যুতে ঢাকা জাতিসংঘের কাছে নগদ সহায়তা চায়। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা চায় যে এই নগদ সহায়তা কোন কোন খাতে এবং কীভাবে খরচ করা হবে, সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা। শুধু তাই নয়, সেই সুপারিশমালা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ঐকমত্য থাকতে হবে।

ঢাকার এক কূটনীতিক ব‌লেন, টুর্কের এই সফরে অনেক বিষয়ে আলাপ হবে, তবে সফর শেষে আলো‌চিত বিষ‌য়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলা নিয়েও তুর্কের সফরে আলোচনা হতে পা‌রে।

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার বিষয়‌টি জ‌টিল প্রক্রিয়া জা‌নি‌য়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব‌লেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার বিষ‌য়ে প্রস্তাব রয়েছে। টুর্কের সফরে তারা এটি আলোচনায় তুলবেন। কিন্তু বাস্তবতা এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটি আদৌ ঢাকায় স্থাপন করা সম্ভব হ‌বে কিনা— ‌সেটাই বড় প্রশ্ন। দ‌ক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দে‌শে অফিস খোলার চেষ্টা ক‌রে‌ছে, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়‌নি।

‌সোমবার ঢাকায় অবস্থিত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার টুর্ক ২৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সফরে তিনি অন্যদের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন।

সফরকালে হাইকমিশনার বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।

টুর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভাষণ দেবেন, যেখানে তিনি সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের তথ‌্য বল‌ছে, আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া হবে। টুর্কের সফ‌রে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি নি‌য়ে সংশ্লিষ্টদের স‌ঙ্গে আলাপ-আলোচনা হ‌বে।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সা‌বেক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ২০২২ সা‌লে বাংলা‌দেশ সফর ক‌রে‌ছি‌লেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *