দুজনেই চিকিৎসক। কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। তবে আবাসন সূত্রে মেয়েটি থাকেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডরমেটরিতে। পেশাগত সুবাদেই দুজনের পরিচয়। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। অতঃপর প্রেম। এই চিকিৎসক জুটির নাম ডা. রিজওয়ানুর রহমান মাসুম ও জান্নাতুল ফেরদাউস। বয়সে ছোট হলেও মাসুমের প্রতি শুরু থেকেই প্রবল আকর্ষণ জান্নাতুল ফেরদাউসের। এই আকর্ষণের কারণেই বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। তবে তা ছিল খুব গোপনে। কারণ জান্নাতুল ফেরদাউস বিবাহিত। তার স্বামী এই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক। স্বামীর আড়ালে মাসুমের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি। তা গড়িয়েছে থানা পুলিশ পর্যন্ত। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাতে। ঘটনাস্থল ঢামেক হাসপাতালের ডরমেটরির চতুর্থ তলার ডি-৯ নম্বর বাসায়।
এই বাসাতেই থাকতেন সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসায় আসেন ওই চিকিৎসকের বাবা রোকন উদ্দিন ও মা সালমা আক্তার। বেশ কিছু সময় পরে দরজা খোলে দেন তাদের পুত্রবধূ ডা. জান্নাতুল ফেরদাউস। দরজা খুলতে সময় ক্ষেপণের বিষয়ে জানতে চাইলে জান্নাতুল ফেরদাউস কোন উত্তর দিতে পারেননি। ঘরে প্রবেশ করে বাথরুমে যেতে চাইলে তা ভেতর থেকে বন্ধ পান। একপর্যায়ে দরজা ভাঙতে চাইলে বাথরুম থেকে বের হন এক যুবক। রোকন উদ্দিন জানান, ওই যুবককে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখে চমকে উঠেন তারা। ওই যুবকের নাম রিজওয়ানুর রহমান মাসুম। ইতিমধ্যে রোকন উদ্দিনের চিৎকার শুনে প্রতিবেশী ডা. সুদীপ রঞ্জন দেবসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে যান।
শ্বশুর রোকন উদ্দিনের জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে জান্নাতুল ফেরদাউস স্বীকার করেন ডা. মাসুমের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। বিষয়টি জানার পর পুলিশে খবর দেন রোকন উদ্দিন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাসুমকে আটক করে পুলিশ। ততক্ষণে পালিয়ে যান ডা. জান্নাতুল ফেরদাউস। এ ঘটনায় রোকন উদ্দিন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় রাতেই একটি মামলা করেন। এতে মাসুম ও জান্নাতুল ফেরদাউসকে আসামি করা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপর বাসা থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান জান্নাতুল ফেরদাউস।
সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় জান্নাতুল ফেরদাউসের স্বামী দেশে ছিলেন না। তিনি কয়েক সপ্তাহ আগে তিন মাসের সরকারি প্রশিক্ষণে থাইল্যান্ডে যান। এই সুযোগে প্রায়ই ঢামেক হাসপাতালের ডরমেটরির ওই বাসায় আসা-যাওয়া করেন ডা. মাসুম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী এক চিকিৎসক জানান, মাসুম প্রায়ই রাতে ওই বাসায় থাকতেন। সকালে তাকে বের হয়ে যেতে দেখেছেন তারা। সহকর্মীরা জানান, জান্নাতুল ফেরদাউসের চলাফেরা ছিল রহস্যজনক। তবে মাসুম তাকে আপা বলে সম্বোধন করতো। কিন্তু মাসুমের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেই যে প্রেমের সম্পর্ক তা অনেকে জেনে যান। ঘটনার দিন বিকালে মাসুম ওই বাসায় যান। বাসায় ঢোকার পরপর দরজা বন্ধ করে দেন তারা। সূত্রমতে, এই খবর পেয়েই ডরমেটরির ওই বাসায় ছুটে যান জান্নাতুলের শ্বশুর-শাশুড়ি। দরজা খুলতে দেরি হলে তারা ওই সময় প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন। এরপরই হাতেনাতে বিষয়টি ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় আটককৃত ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমান মাসুমের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার বসুফাদুখোলা গ্রামে। তার পিতার নাম আহমদ কবির। তিনি বনানী থানার মহাখালীর জিপি চ ৮৩/৩ ওয়ারলেস গেট এলাকায় থাকতেন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অপর আসামি জান্নাতুল ফেরদাউসের পিতার নাম আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। তারা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পূর্ব নাখালপাড়ার ২৩৮/১ নম্বর বাড়িতে থাকেন। কয়েক বছর আগে লক্ষ্মীপুর সদরের লামচরী গ্রামের রোকন উদ্দিনের চিকিৎসক ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। নূর আলম স্ত্রীসহ ঢামেক হাসপাতালের ডরমেটরিতে থাকলেও তার মা-বাবা থাকেন মিরপুর-১০ এর বি ব্লকের নয় নম্বর সড়কের দুই নম্বর বাড়িতে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক হারুন জানান, চুরি ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামি ডা. জান্নাতুল ফেরদাউসকে আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।