ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় গত কয়েকদিন ধরে রেকর্ড ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় রাজ্যটিতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২০ জনে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
এছাড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই নিয়েছেন। রাজ্যটিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৭ লাখ। ঘটেছে বহু ভূমিধসের ঘটনাও।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত চার দিন ধরে ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতি বৃহস্পতিবারও ভয়াবহ অবস্থায় ছিল। এদিন দক্ষিণ ত্রিপুরায় কাদার স্রোতে চাপা পড়ে নারী ও শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ত্রিপুরার আটটি জেলার জন্যই ‘রেড অ্যালার্ট’ বজায় রেখেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় সাহায্য ও সহায়তা আরও বাড়াতে বিমান বাহিনী কাজ করছে।
এছাড়া ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) আরও দল সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি সি-১৩০ এবং একটি এএন-৩২ বিমান ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কাজ করেছে। এছাড়া হেলিকপ্টারগুলোও দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে এবং আরও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ত্রিপুরা রাজ্যের নদীগুলোর পানির স্তর এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি রয়ে গেছে। গোমতি, দক্ষিণ ত্রিপুরা, উনাকোটি এবং পশ্চিম ত্রিপুরার মতো জেলাগুলো বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ধলাই, খোয়াই, দক্ষিণ ত্রিপুরা, পশ্চিম ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা এবং উনাকোটি – ছয়টি জেলায় নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আট জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সব মিলিয়ে রাজ্যে ৬৫ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য গত ১৯ আগস্ট থেকে জেলা প্রশাসন ৪৫০টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৭ লাখ।
এনডিটিভি বলছে, বন্যার কারণে ত্রিপুরায় ২০৩২টি স্থানে ভূমিধস হয়েছে, যার মধ্যে ১৭৮৯টি পরিষ্কার করা হয়েছে। পুরোদমে চলছে সংস্কার কাজ। ১৯৫২টি স্থানে রাস্তায় ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৫৭৯টি স্থানে এখন পর্যন্ত ভাঙন মেরামত করে পরিষেবা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া আগরতলা থেকে সমস্ত রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং অন্যান্য বন্যা দুর্গত এলাকায় টেলিযোগাযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর রাজ্যের অনেক জায়গায় আজ এবং আগামীকাল ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সারা রাজ্যে আজ এবং আগামীকাল চারটি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।