বন্যায় বিপর্যস্ত ১৩ জেলা যেন চেনার উপায় নেই

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এর মধ্যে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তবে নতুন করে আরও তিন জেলার বন্যাকবলিত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। সেগুলো হলো- রাঙামাটি, কক্সবাজার ও সিলেট।

জানা যায়, বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণসহ উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেনা সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, দেশের বন্যাকবলিত ১০ জেলায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত বুধবার থেকে আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও পাঁচ জেলাসহ মোট ১৩ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর মানুষ। জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা কার্যত পানির নিচে। কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি আর কোথাও কোথাও একতলা পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে। অন্যান্য উপজেলার চিত্রও প্রায় একই।

এ ছাড়া, নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের একাধিক এলাকা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া, পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ।

রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

চার জেলায় ৮ মৃত্যু

এদিকে চলমান বন্যায় কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন বন্যার পানিতে তলিয়ে, একজন বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং একজন মাথায় গাছ পড়ে মারা গেছেন। এছাড়া ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে একজন মারা গেছেন। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, কক্সবাজারে পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *