‘চুলায় আগুন দিতে পারি নাই। সকালে মুড়ি খেয়েছি। বৃষ্টিতে রান্নাঘরে পানি উঠেছে। রান্না না করলে সন্তানদের কি খাওয়ামু। এত পানি রান্না করারও উপায় নাই। বাবা এত বৃষ্টি, এত পানি জীবনেও দেখি নাই।’
বুধবার (২১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে এভাবেই দুর্ভোগের কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশাড়পাড় ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মোল্লাবাড়ির তাহেরা বেগম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরের দুয়ারে মুখে কাপড় দিয়ে বসে আছেন তাহেরা বেগম। রান্নাঘরে পানি উঠায় সন্তানদের শুকনো খাবার দিয়েছেন তিনি। কেবল তাহেরা বেগম নয় আশপাশের সবার একই অবস্থা। পানিবন্দি মানুষগুলো কেবল আল্লাহর দিকে চেয়ে আছেন।
হাসিনা বেগম নামে এক গৃহিণী ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাল দখল করে দোকান পাট হয়েছে। খাল দিয়ে পানি যায় না। অনেক জায়গায় খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আমাদের সাহায্য লাগবে না। আগে পানি নামানোর ব্যবস্থা করুন।
জহিরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে মানুষের আয় রুজি বন্ধ হয়ে আছে। অথচ কিস্তির টাকা নিতে এনজিওগুলো চাপ দিচ্ছে। মানুষের কাছে টাকা নাই, তাও তারা জোরাজুরি করছে। আসলে গরিবের দুঃখ কেউ বুঝে না।
সেনবাগের ডোমনাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রোকেয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জলাবদ্ধতায় বন্যার অবস্থা ভয়াবহ। বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়ার মতো অবস্থা নাই। ক্লাস রুমেও পানি ঢুকেছে। মানুষের সুপেয় পানি পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত আবহাওয়া অফিসে রেকর্ড করা হয়েছে। এখনো বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
সেনবাগ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ অবৈধ বাধ ও খাল উদ্ধারের অভিযান পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা প্রশাসন সাধারণ মানুষদের নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। খাল-নালা পরিষ্কারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মানুষদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।