গাজীপুর অফিস: গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নূর আলম (২২) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ১৩৯ জনের নামে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানায় মামলাটির রেকর্ড হয়। মামলায় বাদি হয়েছেন- নিহত নূর আলমের পিতা মো. আমির আলী (৪৪)। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের মোল্লাপাড়া মধ্য কুমরপুর এলাকায়। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার তেলিপাড়া এলাকার ডাক্তার নাহিদের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে- আওয়ামী লীগের প্রেসডিয়াম সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও রুমানা আলী টুসি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মতিউর রহমান মতিসহ ১৩৯জন। তাদের সহযোগী আওয়ামী লীগের আরও ১০০/১৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
বাদি মামলায় উল্লেখ করেন- শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৬ জনের নির্দেশ অনুযায়ী- বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, লোহার রড, রামদা, ছেন, চাপাতি, কোবাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনি জনতাবদ্ধে গত ২০ জুলাই সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের তেলিপাড়ায় হানিমুন রেস্টুরেন্টের সামনে রাস্তায় অবস্থানরত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করা হয়। এ সময় হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরিভাবে কিল ঘুষি মেরে, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে এলোপাথারি মারধর এবং ধারালো কোপা ও দা দিয়ে কুপিয়ে খোরশেদ আলম রশিদসহ (১৯) প্রায় ২৫/৩০ জন আন্দোলনকারীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে।
একপর্যায়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে তাদের হুকুমে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্রধারী এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত আসামিরা ছাত্র জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি ছুঁড়তে শুরু করেন। ওই সময় তাদের ছোড়া গুলিতে বেলা সোয়া ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নূর আলমের (২২) ডান চোখের ওপর অংশ দিয়ে ভেতরে গুলি ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে নূর আলম নিহত হন।
ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কোনো আইনি সহায়তা না নিয়ে তাৎক্ষণিক ছেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান বাদী। ছেলের মৃত্যুতে পরিবারের লোকজন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং বিবাদীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে দেশের বিদ্যমান অরাজকতা পরিস্থিতির কারণে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দিতে দেরি হয়।