ছাত্র-জনতার ক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন ছাত্র-জনতা যখন তার সরকারি বাসভবনের দিকে এগিয়ে আসছিল তখন তিনি গোপনে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার নিয়ে গত জুন মাসে প্রথম আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু ১৬ জুলাই যখন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সারা বাংলাদেশে ছয়জন নিহত হয় তখন এটি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটে।
শেখ হাসিনার পতনের বিষয়টি ভারতে শঙ্কা তৈরি করে। কারণ তিনি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় মিত্র।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স-২৪ কে ভারতীয় লেখক সম্পাদক রাহুল ত্রিপাঠী বলেছেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের চেয়ে শেখ হাসিনাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এ কারণেই দেশটি এখন এমন শঙ্কায় পড়েছে।
সংবাদমাধ্যমটিতে বলা হয়েছে, গভীর সম্পর্ক গড়ার জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয়ই তাদের নিজ দেশে গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণকে উপেক্ষা করেছেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে যে সতর্কতা দিয়েছে সেটিকে ভণ্ডামি হিসেবে অভিহিত করেছে ফ্রান্স-২৪।
সংবামাধ্যমটিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের বিষয়টি গত কয়েক বছর ধরেই তৈরি হচ্ছিল। যদিও সরকারি চাকরির কোটার সংস্কার নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন তার শাসন অবসানের পথ তৈরি করেছে। কিন্তু গত ৭ জানুয়ারি যখন তিনি অস্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসেন তখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে একটি ‘অস্বচ্ছ’ নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করে। কিন্তু আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত ও চীন ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শুভেচ্ছা জানায়।
বিশেষ করে নির্বাচন শেষে নরেন্দ্র মোদির টুইটটি ছিল ন্যাক্কারজনক। সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দল নির্বাচনটি বয়কট করলেও মোদি শেখ হাসিনা এমনকি বাংলাদেশের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দেন।
ভারতীয় লেখক ও সম্পাদক সলিল ত্রিপাঠী বলেছেন, “(মোদি শুভেচ্ছা জানালেও) পুরো বিষয়টি ছিল বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। ভারত শেখ হাসিনার ওপর অতিরিক্ত আর বাংলাদেশের ওপর কম বিনিয়োগ করেছে। ভারত তার সব ডিম একটি ঝুড়িতেই রেখেছিল। আর ভূ-কৌশলগত দিক দিয়ে এটি অবশ্যই কোনো বুদ্ধিদীপ্ত কিছু ছিল না।”