শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে। শুরুতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রদবদল অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরবর্তী ধাপে মাঠ প্রশাসনেও ‘শুদ্ধি অভিযান’ পরিচালনা করা হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া দলবাজ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরও (ইউএনও) সরিয়ে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণ করা হয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে তাদের সরানো হচ্ছে। এবার মাঠ প্রশাসনেও এ শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে।শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলবাজ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে করে সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তাও বাস্তবায়ন সহজ হবে।
এদিকে বিভিন্ন অভিযোগ থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাংগীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ১০ জন সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হয়েছে। তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে আজ বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান মো. লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য (সচিব) মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের আমলে দলীয় বিবেচনায় অনেক দলবাজ কর্মকর্তাকে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেককে নিয়োগ ও পদন্নোতি বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা জনমানুষের দাবি। এ দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চলছে। মাঠ প্রশাসনেও দ্রুতই এ অভিযান শুরু হবে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা
পর্যায়ক্রমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়োগও বাতিল হবে বলে জানা গেছে।
শুধু বাতিল বা সরানো নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা বিভিন্ন কারণে নিয়োগ ও পদন্নোতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতিও দেওয়া হচ্ছে। উপ-সচিব পদে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন ১১৭ কর্মকর্তা। তারা পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন। এদিন রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
২৮ থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশ করলেও যাদের আওয়ামী লীগ সরকার নিয়োগ দেয়নি, এ রকম ২৫৯ জন প্রার্থীকে ভূতাপেক্ষিকভাবে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের আমলে দলীয় বিবেচনায় অনেক দলবাজ কর্মকর্তাকে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেককে নিয়োগ ও পদন্নোতি বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের সব স্তরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা জনমানুষের দাবি। এ দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চলছে। মাঠ প্রশাসনেও দ্রুতই এ অভিযান শুরু হবে। এসব অভিযানের ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে।
আরেক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অপরাধ করেও অনেক কর্মকর্তা শাস্তি পাননি। অনেকে বড় অপরাধ করেও ছোট শাস্তি পেয়েছেন। তবে এখন প্রশাসনে যেভাবে শুদ্ধি অভিযান চলছে, এভাবে চলতে থাকলে দুর্নীতি আর অনিয়ম এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ সবার মধ্যেই ভয় থাকবে, অনিয়ম করলে ছাড় নেই।