সবিতা রানী, শেরপুর(বগুড়া): পুকুর নিয়ে বিবাদে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সদস্য মিজানুর রহমান
পুকুর নিয়ে বিবাদে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন বগুড়া জেলার “শেরপুরের ভবানীপুর ইউনিয়নের” গ্রাম পুলিশের সদস্য মিজানুর রহমান।
মিজান আমার বড় ছাওয়াল। ওর কামাই দিয়ে আমাগো সংসার চলত। এই ছাওয়ালকে ওরা পিটাইয়া মাইরা ফেলে দিল। এখন কে আমার সংসারটা দেখবি?’ এ কথা বলেই কেঁদে ওঠেন মাহেলা বেগম (৬০)।মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (৩০) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্য। ইউনিয়নের আটাইল গ্রামে মোশার পুকুরপাড়ে তাঁর বাড়ি। গত ৬ আগস্ট সরকারি একটি খাসপুকুরের দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে মিজানকে পিটিয়ে হত্যা করেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। মিজান ছিলেন মোশার পুকুরপাড়ে ভূমিহীন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এই পুকুরপাড়ে ৩২টি পরিবারের বসবাস, যাদের অধিকাংশের সংসার চলে দিনমজুরির আয়ে।নিহত মিজানের বাবা মোজাফফর আলী ও ভূমিহীন সমিতির আরেক সদস্য আবদুল হাকিম জানান যে, আটাইল গ্রামের মোশার পুকুরটি সরকারি সম্পত্তি। ১ দশমিক ৯৫ একর আয়তনের এই পুকুর তাঁরা ভূমিহীন সমিতি থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। মাস চারেক আগে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন তাঁরা। পুকুরটির মধ্যে পার্শ্ববর্তী ঢেপুয়া গ্রামের আবদুস সামাদের পরিবারের কিছু সম্পত্তি আছে। সামাদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান তাঁরা।এই দুই ব্যক্তি আরও বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর গত মঙ্গলবার, সকালে আবদুস সামাদ ও তাঁর ভাই আবু বক্করসহ ১৫ থেকে ২০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে পুকুরটির দখল নেওয়ার জন্য আসেন। তাঁরা জাল ফেলে মাছ ধরতে শুরু করেন। এ সময় তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেন, দেশে এখন তাঁদের সরকার। তাঁরা যা বলবেন গ্রামে তাই হবে। এ সময় মিজানসহ ভূমিহীন সমিতির অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ বাধা দিলে আবদুস সামাদ, আবু বক্করসহ অন্যরা তাঁদের মারধর শুরু করেন। এতে মিজানের মাথায় গুরুতর জখম হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বগুড়া জেলার “শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে” নেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় ঢাকার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। লাশটি এখনো হাসপাতালেই আছে।নিহতের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে সংসার অন্ধকারে পড়ে গেল। দুই শিশুসন্তানসহ পরিবারের সদস্যসংখ্যা সাতজন। স্বামী মিজান ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তি। স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।গত রোববার,১২ আগষ্ট /২৪, ঢেপুয়া গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত আবদুস সামাদকে তাঁর বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি তাঁর ভাই আবু বক্করকেও। সামাদের মেয়ে ফারজানা বেগম বলেন, তাঁর বাবা গত শনিবার সকালে বাড়ি থেকে কোথায় চলে গেছেন, তা তাঁরা জানেন না।মোশার পুকুরপাড়ের ভূমিহীন পরিবারের অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ আমাদের প্রতিনিধি সবিতা রানীকে বলেন, প্রতিটি ভূমিহীন পরিবার দিনমজুরি করে সংসার চালায়। পুকুরপাড়ে তাঁরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করছেন। আবদুস সামাদের পরিবার তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করত। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও গ্রাম পুলিশের সদস্য মিজান হত্যার বিচার দাবি করেন তাঁরা।শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, মিজানের মৃত্যুর ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।