গুলশানে দুবৃত্তদের গুলিতে ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যা এবং এর পরবর্তী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের এই সময় পত্রিকা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানীতে প্রকাশ্য রাস্তায় এক বিদেশিকে গুলি করে মারল আইএস জঙ্গিরা৷ সিজার তাভেলা নামের ৫০ বছরের ওই ইতালীয় নাগরিক একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ কলকাতা শহর থেকে মাত্র ৩২৮ কিলোমিটার দূরে, খাস ঢাকার গুলশন এলাকার কূটনৈতিক অঞ্চলে এই ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করার পরই ঢাকা শহরে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস নিজেদের নাগরিকদের চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে৷
ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে আইএস যে ভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছে তা দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে দিল্লির৷ বছর দেড়েক আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কিছু এলাকা দখল করে নতুন করে খিলাফতের ঘোষণা করেছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)৷ কিন্ত্ত অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নৃশংসতা ও অত্যাচারের মাত্রায় আল কায়দাকেও পিছনে ফেলে দেয় তারা৷ এর আগে পশ্চিম এশিয়ায় ত্রাণের কাজ করতে যাওয়া বিদেশি নাগরিকদের অপহরণ করে নৃশংস ভাবে খুন করেছে আইএস৷ সে সমস্ত হত্যার ভিডিয়ো নিয়মিত ইন্টারনেটে পোস্ট করেছে তারা৷ ভারতের নানা রাজ্য থেকে আইএস-এ যোগ দিতে তরুণদের মধ্যে প্রবণতা বাড়ছে৷ পশ্চিমবঙ্গ, অসমের মতো বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে এই প্রবণতা যে বাড়ছে তার প্রমাণ আগেও দেখা গিয়েছে৷
গত মাসেই দিল্লিতে ডিজি সম্মেলনে আইএস সম্পর্কে সব রাজ্যকেই সতর্ক করা হয়েছিল৷ ঢাকার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাননি রাজ্যের পুলিশ কর্তারা৷ স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকার ঘটনাটি নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু না বললেও জানিয়েছেন আইএস-এর তত্পরতা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন ওয়াকিবহাল৷ তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সব কটি নিরাপত্তা এজেন্সিকেই নিয়মিত সতর্কবার্তা পাঠানো হয়৷ কলকাতায় বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷ অসমের রাজ্য পুলিশের ডিজি খগেন শর্মা মঙ্গলবারই এক সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, রাজ্যে আইএস তত্পরতার উপর কড়া নজর রাখছে পুলিশ-প্রশাসন৷ তাঁর কথায়, অসম থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ আইএস-এ যোগ দিয়েছে বলে খবর নেই৷ তবে অনেকেই নিয়মিত ওই জঙ্গি সংগঠনের ওয়েবসাইটে যান৷ জম্মু-কাশ্মীর ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো অসমেও তরুণদের মধ্যে আইএস সম্পর্কে কৌতূহল ক্রমেই বাড়ছে৷
সোমবার রাতে, ঢাকার গুলশন এলাকায় জগিং করতে বেরিয়েছিলেন ৫০ বছরের সিজার৷ আচমকাই মোটরবাইকে চড়ে তিন জন এসে তাঁর উপর গুলি চালিয়ে পালায়৷ গুরুতর আহত অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন৷ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক রিকশাচালক বলেন, আততায়ীরা গুলি চালিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়৷ সিজারের মানিব্যাগ বা মোবাইল ফোন জিনিস ছিনতাই করার চেষ্টা হয়নি৷ ঢাকার পুলিশ কমিশনার ওহিদুজ্জামান মিয়াঁ বলেন, কে খুন করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে ছক কষে খুনের জন্যই হামলা চালানো হয় সিজারের উপর৷ এই ঘটনায় এখনও কেউ ধরা না পড়লেও তদন্তে বিশেষ দল গড়েছে পুলিশ৷
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেদের ওয়েবসাইটে আরবিতে একটি বিবৃতি জারি করে জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সেখানে ঘটনার দায় স্বীকার করে বলা হয়, মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে বিধর্মী জোটের কোনও নাগরিকই সুরক্ষিত নয়৷ বাংলাদেশে আইএস-এর এটি প্রথম হামলা বলে মনে করা হচ্ছে৷ যদিও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি আইএস যোগ মানতে চাননি৷ তবে হামলার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার দূতাবাস সে দেশের নাগরিকদের চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করে৷ সোমবারই ইংল্যান্ড ব্রিটিশ নাগরিকদের সতর্ক করে জানিয়েছিল বাংলাদেশে পশ্চিমি দুনিয়ার বাসিন্দা এবং প্রতিষ্ঠানের উপর জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে৷ মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের যে কোনও জমায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে৷
এই ঘটনায় সারা বিশ্বে নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার৷ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে আসন্ন বাংলাদেশ ক্রিকেট সফর নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও৷ ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেন, নৃশংস এবং কাপুরুষোচিত এই ঘটনার নিন্দার ভাষা নেই৷ মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা৷
আর দু-দিন পরেই বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের এক বছর পূর্ণ হবে৷ ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল মুজাহিদিনের৷ তার আগেই ঢাকার এই ঘটনা রাজ্য প্রশাসনের রক্তচাপ বাড়াবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ গত এক বছরে বাংলাদেশে চার জন ব্লগারকে খুনের ঘটনাতেও চরমপন্থী সংগঠনগুলির সক্রিয়তা বেড়েছে বই কমেনি৷ এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকারের পাশাপাশি দুর্ভাবনা বাড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও৷