দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি। এ সময় বিভিন্ন স্থানে সঙ্ঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের হাতে আসা শেষ খবর পর্যন্ত অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ফেনীতে সাতজন, সিরাজগঞ্জে চারজন, পাবনায় তিনজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় তিনজন, মুন্সীগঞ্জে তিনজন, বগুড়ায় তিনজন, ভোলায় তিনজন, রংপুরে তিন, সিলেটে দু’জন এবং কুমিল্লায় একজন, জয়পুরহাট একজন, বরিশালে একজন ও রাজধানী ঢাকায় একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে নয়া দিগন্তের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ তুলে ধরা হচ্ছে,
ফেনীতে নিহত ৭
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির সমর্থনে নামা আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। এতে সাতজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো অর্ধশতাধিক।
সিরাজগঞ্জে নিহত ৪
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ডাকা ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ মধ্যে সিরাজগঞ্জে বিক্ষোভকারী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সঙ্ঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া জেলায় দুই সংসদ সদস্যের বাড়িঘর ও থানায় ভবনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
ইউএনবির স্থানীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মরদেহ নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
পাবনায় আ.লীগের গুলিতে নিহত ৩
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এ ঘটনায় ৫০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া তত্ত্বাবধানে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীরা নানা শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পেছন থেকে অতর্কিত গুলি বর্ষণ করা করা হয়।
এ ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম (১৯), মাহবুবুল হোসেন (১৬) ও ফাহিম (১৭) নামের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জে ৩ জন নিহত
কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সঙ্ঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। দুজনের মৃত্যুর বিষয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরাম উল্লাহ এবং অপরজনের বিষয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন।
মাগুরায় নিহত ৩
কোটা সংস্কার আন্দোলনে এক দফা দাবি ঘিরে মাগুরায় সকাল থেকে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় গুলিতে অন্তত তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী ছাত্ররা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পারনান্দুয়ালী এলাকায় ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের ওপর অবস্থান নেয়।
নিহতরা হলেন জেলা ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি (২৬), শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের ফরহাদ হোসেন (২৩) ও মহম্মদপুর উপজেলান বালিদিয়া গ্রামের সুমন শেখ। এ সময় সংঘর্ষে ছাত্র, পুলিশ ও সাংবাদিক সহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জে নিহত ৩
মুন্সিগঞ্জ শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্ঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক।
আজ রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে সঙ্ঘর্ষ চলছিল।
নিহতরা হলেন শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরাজীর ছেলে রিয়াজুল ফরাজী (৩৮), একই এলাকার মো: সজল (৩০) এবং হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার মেহেদী হাসান। তাদের মধ্যে রিয়াজুল ও সজল ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতাল নেয়ার সময় মেহেদী হাসান মারা যান বলে জানান তার স্বজনেরা।
বগুড়ায় নিহত ৩
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সঙ্ঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। তারা তিনজনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।
নিহতদের একজন হলেন রংপুর সিটি করপোরেশেনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায়। সংঘর্ষ চলাকালে শহরের কালিবাড়ি গেটের পাশে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে লোকজন। কাউন্সিলরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু।
বিস্তারিত আসছে…