৭ জেলায় নিহত ১৭

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফেনীতে পাঁচজন, রংপুরে চারজন, পাবনায় তিনজন, মুন্সীগঞ্জে দুইজন, কুমিল্লায় একজন, মাগুরায় একজন ও বরিশালে একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মারা যাওয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচিতে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আরও দেড় শতাধিক। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়।

নিহতের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম এবং পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন।

রংপুরে কাউন্সিলরসহ নিহত চার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুরের রাজপথে মানুষের ঢল নামে। রোববার (৪ আগস্ট) সিটি বাজার এলাকার কাছাকাছি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধান হারা ও তার ভাগনেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্দার আব্দুল জলিল ও মিজানুর রহমান মিজান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, দুজনের মরদেহ হাতে পেয়েছেন। তবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

অন্যদিকে, কাউন্সিলর হারাধান হারা ও তার ভাগনেকে কুপিয়ে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও ১৯ বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু।

পাবনায় তিন শিক্ষার্থী নিহত

পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষার্থীরা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পেছন থেকে অতর্কিত গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (১৯), মাহবুুবুল হোসেন (১৬) ও ফাহিম (১৭) নিহত হন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কে অবস্থান করছেন।

মুন্সীগঞ্জে গুলিতে দুইজন নিহত

মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দু’জন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কুমিল্লায় বাসচালক নিহত

অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে কুমিল্লার দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দেবিদ্বার। সংঘর্ষে মো. রুবেল (৩৪) নামের এক বাসচালক নিহত হয়েছেন।

দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলা চত্বরে সংঘর্ষের সময় তিনি নিহত হন। রুবেল উপজেলার বারেক এলাকার বাসিন্দা ও প্রান্তি বাসের চালক ছিলেন। দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এহসান আলী ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাগুরায় ছাত্রদলের নেতা নিহত

মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের ঢাকা রোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেট নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলি করে। এ সময় নিহত হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম দাবি করেন বলেন, রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।

বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা নিহত

বরিশালে টুটুল চৌধুরী নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এএসএম সায়েম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর আঘাতগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে মাথার খুলির ভেতরে থাকা অনেককিছুই বাইরে বের হয়ে গেছে। এক কথায় রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত টুটুল চৌধুরী বরিশাল মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ দিপু।

এছাড়া, কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সকালে শাহবাগে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আন্দোলন চলাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভেতরে থাকা অন্তত ৫০টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। উত্তরা, প্রগতি সরণি, শাহবাগেও অন্দোলনকারীরা অবস্থান করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *