মা আমার মৃত্যু হলে দাবী আদায়ের পর লাশ রাজপথ থেকে এনে দাফন করো

Slider বাংলার সুখবর


গাজীপুর: মা আমার জন্য দোয়া করো। আমি মারা গেলে আমার লাশ দাফন করো না, রাজপথে রেখে দিও। দাবী আদায় হওয়ার পর দেশ শান্ত হলে আমার লাশ নিও। ১৮ জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আগে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে শেষ কথা হিসেবে এসব কথা বলে গেছেন ঢাকার উত্তরায় নিহত টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শেখ ফাহমিন জাফর।

বৃহস্পতিবার(১ আগষ্ট) এই প্রতিবেদককে নিহত ফাহমিনের মা প্রায় বাকরুদ্ধ কাজী লুলুল মাকহমিন এসব কথা বলেন।

ফাহমিনের মা বলেন, ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে আমার ছেলে আন্দোলনে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে যায়, মা আমার জন্য দোয়া করো। আমি মারা গেলে আমার লাশ দাফন করো না, রাজপথে রেখে দিও। দাবী আদায় হওয়ার পর দেশ শান্ত হলে আমার লাশ নিও। আমার মত অনেকের মৃত্যু হলে সবার লাশ রাজপথে থাকবে। অনেক মারাই তোমাকে সহযোগিতা করবে, চিন্তা করো না। এটাই ছিল আমার ছেলের শেষ কথা। তারপর বেলা পৌনে তিনটার সময় খবর পাই আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। আমি উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলের লাশ। আমি আমার ছেলের সারা শরীরে অসংখ্য গুলির চিহ্ন দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর জ্ঞান ফিরলে ছেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ে যাই। সেখানে তারটিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করি। আমার ছেলের লাশের কোন ময়না তদন্ত হয়নি। কেউ কোন খবরও নেয়নি। ছেলে হত্যার বিচারের জন্য কোন মামলাও করিনি। কারণ এখন মামলা নিবে না। সময় হলে ছেলে হত্যার বিচার চাইব। প্রশাসনের কেউ আমার সাথে আজ পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। আমি এখন ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। আমার কখন দিন যায়, রাত হয়, জানিনা।

তিনি বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে ফাহমিন ছিলো সবার ছোট। সে খুব মেধাবী ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতাও লিখত আমার ছেলে। আজ সবই স্মৃতি হয়ে সব সময় আমার চোখে ভাসে।

টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো: রফিকুল ইসলাম ছাত্রের বলেন, টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র ফাহমিনের আইডি নম্বর ২৩০১০৫১৬৪। তার পিতার নাম শেখ আবু জাফর। বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার তারটিয়া গ্রামে। ফাহমিন তার মায়ের সাথে ঢাকার দক্ষিণ খান থানার গাওয়াইর মাদরাসা রোডে বসবাস করে টঙ্গী সরকারী কলেজে প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করতো। ফাহমিনের বাবা রাজশাহীতে একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরী করেন। ফাহমিন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে জিপিএ- ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তারপর সে টঙ্গী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়।

১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কম্পিøট শাটডাউন চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। তাদের মধ্যে নিহত শেখ ফাহমিন জাফর টঙ্গী সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *