দুই যুগের বেশি সময় ধরে এ এক পরিচিত দৃশ্য। ঈদের দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন দুই নেত্রী। সে পরিচিত দৃশ্যে এবার কিছুটা পরিবর্তন আসছে। এবার ঈদের দিনে দেশের বাইরে থাকছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া ঈদ করবেন বৃটেনে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ঈদ করবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গতকালই ঢাকা ত্যাগ করেছেন। শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও উল্লেখযোগ্য
সংখ্যক রাজনীতিবিদ ঈদ করবেন দেশের বাইরে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবার ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন লন্ডনে। ২০শে সেপ্টেম্বর সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। আগামী ৪ঠা অক্টোবর তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, মূলত স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে সময় কাটাতেই তিনি লন্ডন গেছেন। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল আজহা পালন করবেন। আগামী ৪ঠা অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবারের ঈদ উদযাপন করবেন নিউ ইয়র্কে। আলাপকালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছি। সেখানেই ঈদ উদযাপন করবো। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হওয়ায় আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের ঈদ কাটবে নিউ ইয়র্কে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ায় তাদের ঈদ কাটবে নিউ ইয়র্কে। এদিকে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ২৩শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র গেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি দেশে ফিরবেন ঈদের পর। সে হিসেবে নিউ ইয়র্কেই ঈদ উদযাপন করবেন তিনি। অন্যদিকে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া হজ পালন করতে সৌদি আরব গেছেন। সেখানেই ঈদ পালন করবেন তিনি।
এদিকে চিকিৎসার জন্য ১৫ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। চিকিৎসার পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলের পরিবারের সঙ্গে কয়েক দিন সময় কাটাবেন তিনি। দেশে ফিরবেন ঈদের পর। ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিবারের বড় ছেলে তারেক রহমান। দেশে ফিরতে আইনি জটিলতা ও লন্ডনে একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানের পড়াশোনোর কারণে লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনি। অন্যদিকে জিয়া পরিবারের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাভোগের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে জামিনে মুক্তি পান। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি প্রথমে থাইল্যান্ড ও পরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করলেও দুই মেয়ের পড়াশোনার কারণে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন তার স্ত্রী শর্মিলা রহমান। ফলে বেশ কয়েকবছর ধরেই জিয়া পরিবারের দুই সন্তান ও তাদের পরিবার ঈদ কাটছে দেশের বাইরে। সম্প্রতি আরাফাত রহমান কোকোর বড় মেয়ে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে লন্ডনে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্যে গেছেন। এদিকে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৯ বছর পর বিদেশে দুই ছেলের পরিবার ও নাতনিদের নিয়ে পারিবারিক আবহে ঈদ করবেন তিনি। এদিকে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ২৪শে মে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। বিগত দেড় বছর ধরে সেখানে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, দলের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম। ফলে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই তিন নেতার ঈদ কাটবে যুক্তরাষ্ট্রে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ অবস্থান করছেন সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়। মহাজোট সরকার প্রথম দফা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন তিনি। শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় নবম সংসদ থেকে ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। পরে এখন পর্যন্ত আর দেশে ফিরেননি। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুম এবং বিএনপির সমর্থনে ঢাকা (উত্তর) সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাবিথ আউয়াল প্রমুখ। এর মধ্যে মহাজোট আমলে দফায় দফায় কারাভোগকারী মিলন বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ফলে বিএনপি নেতাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবার ঈদুল আজহা পালন করবেন যুক্তরাজ্যে। এদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থান করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর শিলংয়ে আকস্মিকভাবে উদ্ধার হন তিনি। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ের সেখানে তার বিচার চলছে। ফলে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিলংয়েই থাকতে হচ্ছে সালাহউদ্দিন আহমেদকে। ঈদুল ফিতর তিনি সেখানে কাটিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট্র সূত্র জানায়, ঈদুল আজহা একসঙ্গে কাটাতে শিলং যাচ্ছেন সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ ও তাদের দুই সন্তান। এছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গ দলের অনেক নেতাই বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন এবং সেখানেই কাটাবেন ঈদ।
নিউ ইয়র্ক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে ২২৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, গত সাত বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক সফরসঙ্গী রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, নিরাপত্তা দল, মিডিয়া এবং ব্যবসায়ী মিলে ২২৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। গত বছর জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে ১৭৮ জনের প্রতিনিধি দল গিয়েছিল। তার আগের বছর সেই সংখ্যা ছিল ১৩৪ জন। অবশ্য বরাবরই ব্যবসায়ীরা নিজ খরচে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হন। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস জানিয়েছে এবার এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বে ১১৯ জনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিউ ইয়র্ক সফরে গেছেন। ওই ব্যবসায়ীদের দলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ বেশ ক’জন গণমাধ্যম কর্মীও রয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকারি প্রতিনিধি দলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে ডা. দীপুমনি ও ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন। বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে। শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান। এ সময় কেবিনেট সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করবেন। তিনি লন্ডন থেকে বৃটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে যাত্রা করবেন এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) জন এফ কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনার পর প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে হোটেল ওয়াল্ডর্ফ এস্টোরিয়া নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হবে। কাল ঈদুল আজহা উদযাপনসহ সফরের পুরো সময় ওই হেটেলেই থাকবেন তিনি। এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনকে বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে জাতিসংঘের পরিবেশ সম্পর্কিত সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের টেকসই উন্নয়নে আইসিটি পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। মূল অধিবেশনে তার বক্তৃতা করা ছাড়াও সফরকালে অন্তত ৮টি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নেবেন তিনি। সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তে ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। দেশে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে একদিন যাত্রাবিরতি করবেন। ২রা অক্টোবর তাকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তিনি ৩রা অক্টোবর সিলেট হয়ে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
সংখ্যক রাজনীতিবিদ ঈদ করবেন দেশের বাইরে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবার ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন লন্ডনে। ২০শে সেপ্টেম্বর সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। আগামী ৪ঠা অক্টোবর তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, মূলত স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে সময় কাটাতেই তিনি লন্ডন গেছেন। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল আজহা পালন করবেন। আগামী ৪ঠা অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবারের ঈদ উদযাপন করবেন নিউ ইয়র্কে। আলাপকালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছি। সেখানেই ঈদ উদযাপন করবো। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হওয়ায় আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের ঈদ কাটবে নিউ ইয়র্কে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ায় তাদের ঈদ কাটবে নিউ ইয়র্কে। এদিকে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ২৩শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র গেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি দেশে ফিরবেন ঈদের পর। সে হিসেবে নিউ ইয়র্কেই ঈদ উদযাপন করবেন তিনি। অন্যদিকে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া হজ পালন করতে সৌদি আরব গেছেন। সেখানেই ঈদ পালন করবেন তিনি।
এদিকে চিকিৎসার জন্য ১৫ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। চিকিৎসার পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলের পরিবারের সঙ্গে কয়েক দিন সময় কাটাবেন তিনি। দেশে ফিরবেন ঈদের পর। ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিবারের বড় ছেলে তারেক রহমান। দেশে ফিরতে আইনি জটিলতা ও লন্ডনে একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানের পড়াশোনোর কারণে লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনি। অন্যদিকে জিয়া পরিবারের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাভোগের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে জামিনে মুক্তি পান। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি প্রথমে থাইল্যান্ড ও পরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করলেও দুই মেয়ের পড়াশোনার কারণে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন তার স্ত্রী শর্মিলা রহমান। ফলে বেশ কয়েকবছর ধরেই জিয়া পরিবারের দুই সন্তান ও তাদের পরিবার ঈদ কাটছে দেশের বাইরে। সম্প্রতি আরাফাত রহমান কোকোর বড় মেয়ে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে লন্ডনে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্যে গেছেন। এদিকে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৯ বছর পর বিদেশে দুই ছেলের পরিবার ও নাতনিদের নিয়ে পারিবারিক আবহে ঈদ করবেন তিনি। এদিকে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ২৪শে মে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। বিগত দেড় বছর ধরে সেখানে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, দলের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম। ফলে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই তিন নেতার ঈদ কাটবে যুক্তরাষ্ট্রে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ অবস্থান করছেন সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়। মহাজোট সরকার প্রথম দফা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন তিনি। শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় নবম সংসদ থেকে ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। পরে এখন পর্যন্ত আর দেশে ফিরেননি। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুম এবং বিএনপির সমর্থনে ঢাকা (উত্তর) সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাবিথ আউয়াল প্রমুখ। এর মধ্যে মহাজোট আমলে দফায় দফায় কারাভোগকারী মিলন বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ফলে বিএনপি নেতাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবার ঈদুল আজহা পালন করবেন যুক্তরাজ্যে। এদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থান করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর শিলংয়ে আকস্মিকভাবে উদ্ধার হন তিনি। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ের সেখানে তার বিচার চলছে। ফলে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিলংয়েই থাকতে হচ্ছে সালাহউদ্দিন আহমেদকে। ঈদুল ফিতর তিনি সেখানে কাটিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট্র সূত্র জানায়, ঈদুল আজহা একসঙ্গে কাটাতে শিলং যাচ্ছেন সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ ও তাদের দুই সন্তান। এছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গ দলের অনেক নেতাই বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন এবং সেখানেই কাটাবেন ঈদ।
নিউ ইয়র্ক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে ২২৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, গত সাত বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক সফরসঙ্গী রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, নিরাপত্তা দল, মিডিয়া এবং ব্যবসায়ী মিলে ২২৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। গত বছর জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে ১৭৮ জনের প্রতিনিধি দল গিয়েছিল। তার আগের বছর সেই সংখ্যা ছিল ১৩৪ জন। অবশ্য বরাবরই ব্যবসায়ীরা নিজ খরচে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হন। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস জানিয়েছে এবার এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বে ১১৯ জনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিউ ইয়র্ক সফরে গেছেন। ওই ব্যবসায়ীদের দলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ বেশ ক’জন গণমাধ্যম কর্মীও রয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকারি প্রতিনিধি দলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে ডা. দীপুমনি ও ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন। বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে। শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান। এ সময় কেবিনেট সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করবেন। তিনি লন্ডন থেকে বৃটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে যাত্রা করবেন এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) জন এফ কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনার পর প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে হোটেল ওয়াল্ডর্ফ এস্টোরিয়া নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হবে। কাল ঈদুল আজহা উদযাপনসহ সফরের পুরো সময় ওই হেটেলেই থাকবেন তিনি। এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনকে বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে জাতিসংঘের পরিবেশ সম্পর্কিত সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের টেকসই উন্নয়নে আইসিটি পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। মূল অধিবেশনে তার বক্তৃতা করা ছাড়াও সফরকালে অন্তত ৮টি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নেবেন তিনি। সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তে ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। দেশে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে একদিন যাত্রাবিরতি করবেন। ২রা অক্টোবর তাকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তিনি ৩রা অক্টোবর সিলেট হয়ে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।