মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল চারটা। চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছিল। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় নগরীর মুরাদপুর এলাকা তৈরি হয় রণক্ষেত্র। কোটা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে মুরাদপুরের বেলাল মসজিদ এলাকার একটি ভবনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন। সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের উপর ইট নিক্ষেপ করেন তারা।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এক পর্যায়ে ওই ভবন ঘিরে ফেলেন আন্দোলনকারীরা। ভয় পেয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ওই ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। আন্দোলনকারীরা সেখানে গিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। প্রাণে বাঁচতে অনেকে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভবনের ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় আন্দোলনকারীরা ইট নিক্ষেপ করে। এসময় পাঁচতলা থেকে পড়ে যান তিনজন ছাত্রলীগের কর্মী। নিচে পড়ার পর সেখানও গণপিটুনি দেওয়া হয় তাদের। তাদের দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী মো. জালাল উদ্দিন জুবায়ের ও ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ধীমান সেন গুপ্ত। এর মধ্যে জালালের চোখ উপড়ে ফেলা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় তার হাত। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
ওই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাদ থেকে নামার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্রলীগ কর্মী বাইরের জানালা ও পাইপ ধরে ঝুলে ছিল। এসময় তাদের মাটিতে ফেলে দিতে আন্দোলনকারীরা ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। ইট মারতে মারতে সবাইকে নামানো হয় মাটিতে। এরপর শুরু হয় উপর্যুপরি মারধর। এতে জালাল, ধীমানসহ অন্তত ৯ জন গুরুতর আহত হয়। মারধরের পর প্রায় এক ঘণ্টা পড়ে ছিল তারা। পরে তাদের একটি ভ্যান ও অটোরিকশা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল নিয়ে যান স্থানীয়রা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আতিকুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ষোলশহর স্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে মুরাদপুরে আসেন। তখন মুরাদপুরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছিলেন। সেখানে গেলেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে। একপক্ষ আরেকপক্ষের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সুযোগে তাদের ওপর চড়াও হন আন্দোলনকারীরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় ছাত্রলীগের অন্তত ২০ নেতাকর্মী মুরাদপুর মোড়ের মীর মঞ্জিল নামে একটি ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। তারা সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। আন্দোলনকারীরাও নিচ থেকে তাদের পাথর ছুড়ে মারেন। একপর্যায়ে ভবনের ছাদে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে থাকা পাথর শেষ হয়ে যায়। ততক্ষণে মুরাদপুর মোড় আন্দোলনকারীদের দখলে চলে আসে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরা ভবনটির ছাদে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন। তাদের সঙ্গে না পেরে প্রাণে বাঁচতে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে থামতে যান কর্মীরা। ততক্ষণে অন্তত কয়েকজনকে পিটিয়ে ছাদ থেকে নিচে ফেলা দেওয়া হয়। বাকিরা নিচে নামতে গিয়ে পড়ে যান।’
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘আমি শুরু থেকে কর্মসূচিতে ছিলাম। বিনা কারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ২০ জন কর্মী একটি ছয়তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল। আন্দোলনকারীর ছদ্মবেশে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন তাদের নির্দয়ভাবে সাপ মারার মতো পিটিয়ে ৫তলা থেকে ফেলে দিয়েছে। তারা সবাই নিচে পড়ে মারা গেছে মনে করে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। খবর পেয়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা আমাদের ১৫ জন কর্মীকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।’