বিসিএসের প্রশ্নফাঁসে কোটিপতি নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদত

Slider বাংলার মুখোমুখি

বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার শাহাদত হোসেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের কাদিরগাছা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মৃত বাহার আলী সরদারের ছেলে। নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদত তার গ্রামের ভিটায় তিন বিঘা জমিতে ফলের বাগান করেছেন। বিলে কিনেছেন ৫ বিঘা জমি। সিংড়া পৌর শহরের উপ-শহর ও সরকারপাড়া এলাকাতেও তার অর্ধকোটি টাকার জমি রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে‌। তবে গ্রামের বাড়িতে থাকেন না শাহাদত। এলাকায় তিনি শখেন নামে বেশি পরিচিত।

তাজপুর ইউনিয়নের কাদিরগাছা এলাকার বাহার আলী সরদারের চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাহাদত হোসেন পঞ্চম। মাত্র ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি হয় তার। ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী ও সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত ছিলেন তিনি। অন্য ভাই-বোনদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও শাহাদতের বিত্ত-বৈভবের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

শাহাদতের খালাতো ভাই হানিফ আলী জানান, গ্রামের বাড়িতে শাহাদতের স্ত্রী-সন্তান কেউ থাকেন না। এখানে জমিজমা তিনিই (হানিফ) দেখাশোনা করেন। শুধুমাত্র ঈদে বাড়িতে আসেন। তার ভাইয়ের ৩ বিঘার বাগান ও বিলের ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। বাগানের জন্য তার ভাইকে কিছু দিতে হয় না। তবে ধানের একটি অংশ তিনি তার ভাইকে দেন। ঢাকার মিরপুরে নিজস্ব বাড়িতে পরিবারসহ তার ভাই বসবাস করেন বলে জানান তিনি।

কাদিরগাছা এলাকার বাসিন্দা আনিছুর রহমান বলেন, তিনি (শাহাদত হোসেন) ঈদে বা জালসায় এলাকায় আসতেন। তার কথাবার্তা ভালো ছিল এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। তিনি পাসপোর্ট অফিসে চাকরি করতেন এইটা আমরা জানতাম। তবে মিডিয়াতে দেখলাম তিনি প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে জড়িত।

সোবাহান নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, শাহাদত ঢাকায় ভালো চাকরি করে বলে জানতাম। প্রতিবেশীরা বিপদে পড়লে টাকা চাইলে দিতেন‌।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, শাহাদত হোসেন টাকার বিনিময়ে চাকরি দিতেন বলে জেনেছি। একবার এক চাকরি প্রার্থীর থেকে চাকরির টাকা নিয়ে চাকরি দিতে পারেননি। পরে প্রতারণার মামলায় তাকে মাসখানেক জেলও খাটতে হয়েছিল।

সিংড়ার তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন জানান, শাহাদত মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে সিংড়া উপশহরের মতো জায়গায় কীভাবে ৮ শতক জমি কেনেন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। সরকারপাড়ায় জমি কিনেছেন যার বাজার মূল্য ২৫ লাখ টাকা। যারা এ রকম গর্হিত অপরাধ করে দেশটাকে মেধাশূন্য করার চেষ্টা করছেন এবং নিজেরা কোটি কোটি টাকার অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

সিংড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, শাহাদত হোসেন এলাকায় শখেন নামেও পরিচিত। তিনি বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার রয়েছেন। শাহাদত সপরিবারের ঢাকায় বসবাস করেন। এলাকায় খুব কম আসতেন। তবে শাহাদাতকে নিয়ে তার পরিবারের লোকজন তেমন কিছু বলতে পারেন না। তার বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের চিঠিপত্র আসেনি, নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।

প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার (৮ জুলাই) পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী নাটোরের শাহাদাত হোসেনও রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *