গ্রাম বাংলা ডেস্ক: জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে রাজনৈতিক কালচার সৃষ্টি করেছেন তার বাইরে গিয়ে বাবলু সাহেব কিছু বলতে না পারারই কথা। হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতন্ত্র ও সংবিধানকে পদদলিত করে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে যে কেনাবেচার রাজনীতির সংস্কৃতি জন্ম দিয়েছিলেন, বাবলু সাহেবরা সেই সংস্কৃতিতেই অবগাহন করছেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত আন্দোলনকে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে যারা এরশাদের গণতন্ত্রবিধ্বংসী দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে ধ্বংস করেছেন তারাই এখন গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের বুলি আওড়াচ্ছেন। যারা মতাসীনদের ভয়ে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যায় নিশ্চুপ থাকেন, কাঁটাতারে ঝুলন্ত কিশোরী ফেলানীর লাশ দেখেও টুঁ শব্দটি করেন না তারাই এখন জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধি হয়েছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয়তাবাদী চেতনা হচ্ছে মতাসীন দলের সুরে দণি তালপট্টি বিসর্জনে আনন্দ ধ্বনি করা।
মির্জা আলমগীর বলেন, এরশাদ হচ্ছেন রাজনৈতিক বিকৃতির এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এরশাদ যে ইতিহাস তুলে ধরেছেন সেটি তার নিজস্ব মনগড়া বিকৃত ইতিহাস। ইতিহাসে নায়ক খলনায়ক দুই ধারারই নাম লিপিবদ্ধ থাকে। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে বিভ্রান্ত করার জন্য আনুগত্যের ভান করে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল মিরজাফর গং। ঠিক তেমনি বৃদ্ধ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে আনুগত্য দেখিয়ে কুটিল চক্রান্তে লিপ্ত থেকে গণতন্ত্র বিনাশের পথ প্রশস্ত করেছিলেন এরশাদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। অতঃপর তারা চূড়ান্তভাবে সফলও হন। মিরজাফরের মতো সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় এরশাদ বৈধ নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে চক্রান্তের জাল বিস্তার করতে থাকেন। তার এই চক্রান্তজাল মতাগ্রহণের কয়েক মাস আগ থেকেই বুনতে শুরু করেন। কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে। তিনি সেই সময় সেনাবাহিনীর কথা বলে রাষ্ট্রীয় মতার অংশীদারিত্ব দাবি করেন। আসলে তার এই দাবি ছিল সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থে। তিনি কয়েকটি পাবলিক ফাংশনে তার এই দাবি করেন। চাকরিরত একজন সেনাপ্রধান এই দাবি করতে পারেন না। তিনি শপথ ভঙ্গ করে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কাজ করেছেন। আর তিনি এই বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডে কিছু উমিচাঁদ, রায় দুর্লভদেরও জুটিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে মতাগ্রহণের পর এরশাদের সাথে জগতশেঠদের সংখ্যা বেড়ে যায়, যারা সেলিম, দেলোয়ার, হারুন, মোজাম্মেল, রাউফুন বসুনিয়া, দীপালী সাহা, বাবলু, জেহাদ, ডা: মিলনসহ অসংখ্য শহীদের লাশ ডিঙ্গিয়ে এরশাদের মোসাহেবি করেছেন, মন্ত্রিত্বসহ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির বেপরোয়া লুটপাট করেছেন। তবে এ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকামী ছাত্রজনতা এরশাদের এসব অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিজেদের বুকের রক্তঢালা পথে এই আন্দোলনে প্রধান সিপাহসালারের ভূমিকা পালন করেছে। কারণ এরা বাবলু সাহেবদের মতো এরশাদের প্রলোভনে বিভ্রান্ত হয়নি। নিজেদের আত্মাকে বিক্রি করেননি। এরশাদ যেমন কেনাবেচা করতে পারেন ঠিক তেমনিভাবে নিজেও কেনাবেচার পণ্য হতেও পারঙ্গম।
মির্জা আলমগীর বলেন, এরশাদের ভয়াল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অনন্য আপসহীন লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরশাদের পাতানো নির্বাচনে না গিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। এরশাদের আঁতাতের নির্বাচনে বর্তমান শাসক দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়। তার বৈধতার জন্য এই নির্বাচন দরকার ছিল। কিন্তু কোনোভাবেই বিএনপিকে সেই অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে না পারায় এরশাদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়। এই কারণেই বিএনপির প্রতি এরশাদের যত ােভ। সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীও যোগ দেয়, তখন তো বাবলু সাহেবরা কিম্বা তাদের নেতা এরশাদ সাহেব জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী বলেননি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সব কিছু হারিয়েও দেশ ও মানুষের পে লড়াই করছেন। অন্যায় অহঙ্কারের কাছে কোনো দিনই মাথা নত করেননি। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলা হয়েছে, তার বাড়িঘর কেড়ে নেয়া হয়েছে, তার সন্তানদের নির্যাতিত করা হয়েছে। তারপরও বেগম জিয়া নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করেননি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে না এসে ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচন বর্জন করেছেন। এটিই হচ্ছে প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত। মতার হালুয়ার লোভে রাজনৈতিক নীতিহীনরা যারা প্রতি প্রহরে রঙ বদলায় তারা কখনোই জাতীয়তাবাদী হতে পারেন না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, চতুর এরশাদ একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় নিজের কুকীর্তি ঢাকা দেয়ার জন্য স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ফিরে এসে নানা কুটচাল দিয়ে বিভিন্ন বিভাজনকে উসকে দেন। বিশেষ করে কপট এরশাদ মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান প্রত্যাগত বিভাজনকে পূর্ণভাবে নিজের ফায়দা হাসিলে কাজে লাগান। আর এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও জেনারেল মঞ্জুরকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এভাবেই এরশাদ এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, নিশ্চয়ই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও স্বৈরাচার এরশাদের মতাগ্রহণ প্রক্রিয়া এক নয়। শহীদ জিয়া সিপাহি-জনতার বিপ্লবের সন্তান যিনি নিহত গণতন্ত্রকে জীবনদান করেছিলেন। আর এরশাদ সেই বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আবারো স্বৈরাচারী শাসনের নিগড়ে বন্দী করেছিলেন। জিয়া ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক, আর এরশাদ ছিলেন হানাদারবাহিনীর দোসর।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক দ্বিচারিতা, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, নির্লজ্জ মিথ্যাচার, বারবার প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ ও ধর্মের নামে ভণ্ডামীর মূর্তপ্রতীক হচ্ছেন এরশাদ। পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে তিনি নানা ধরনের ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আসীন হয়েই অবৈধভাবে মতা দখলের কুটকৌশল শুরু করেন। তার এই কুটকৌশলেই প্রাণ হারাতে হয়েছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার। এরশাদ মার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। তার প্রকাশ্য বিচার ও প্রকাশ্য শাস্তি হওয়া উচিত।