মেয়েদের সঙ্গে সেলফি তুলতে খুব ভালো লাগে বলে জানালেন রাজনৈতিক জীবন অস্থির হলেও সাজানো গোছানো দৈনন্দিন জীবন কাটানো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জীবনকে নিয়ম-শৃংঙ্খলার মধ্যে রাখতে ভালোবাসেন তিনি। পোশাক-আশাক বা গেটআপ সবকিছুতেই বাড়ি থেকে বাইরে সবসময় কেতাদুরস্ত ৮৫ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট।
এরশাদ বললেন, সবসময় হালফ্যাশনে চলতে পছন্দ করেন তিনি। গ্ল্যামারাস লুক তার জন্মগত যাকে তিনি নিজেই আরো আকর্ষণীয় করেছেন তার স্মার্টনেসে। একইসঙ্গে আবার দীর্ঘতম সময় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান থাকার রেকর্ডও গড়েছেন এরশাদ।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চব্বিশ ঘণ্টার রাজনীতিক থাকার পরও ব্যক্তিজীবনে কিভাবে এই তারকার মতো জীবনযাপন সম্ভব? পেছনের রহস্যটা কি? তার এখনকার ব্যক্তিগত জীবনইবা কিরকম? কি করে তিনি আকর্ষণের মধ্যমনি?
‘তৃতীয় মাত্রা’র ঈদ আয়োজনে চ্যানেল আই ভবনে এসে চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সেসব কথা বলেছেন তিনি। ব্যক্তিগত লাইফস্টাইল সম্পর্কেও বিস্তারিত জানিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
চ্যানেল আই অনলাইন: কেমন আছেন?
এরশাদ: হ্যাঁ ভালো আছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: প্রথমেই আপনার কাছে জানতে চাই, এই বয়সেও এতো সুন্দর কিভাবে আপনি?
এরশাদ: (হাসি) রুটিন মাফিক জীবন-যাপন করি তাই হয়তো।
চ্যানেল আই অনলাইন: সকালটা কিভাবে শুরু হয় আপনার?
এরশাদ: আমি প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠি। এরপর কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করার পর আমার জিম ট্রেইনার আসে। তার কাছে জিম করি। জিম করার পর গোসল করে নিই। এরপর গ্রিন টি খাই আর খবরের কাগজ পড়ি। সকালের নাস্তাটা বিভিন্ন ফ্রুটস দিয়ে করে থাকি। সঙ্গে থাকে পাউরুটি, ওমলেট আর দুধ। আসলে খাবার আমি খুব পরিমাণ মতো খাই। এরপর বাসায় একটা জায়গায় বসি। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে তাদের সুপারিশ নিয়ে। আমার যতোটুকু সামর্থ্য আছে ততোটুকু দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করি। পার্টির কর্মিরাও আসে, বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি। প্রতিদিন এতো লোক সমাগম হয় বলে আমার ছেলে এই বাড়ির নাম দিয়েছে সুপারিশ বাড়ি। এভাবেই প্রতিদিন সকালের পর্বটা শেষ করি।
চ্যানেল আই অনলাইন: দুপুরের মেনুতে কোন ধরণের খাবার থাকে?
এরশাদ: আমরা যেহেতু বাঙালি তাই বাঙালি খাবারের আইটেমই ভালো লাগে বেশি। রংপুরে একটি সুস্বাদু খাবার আছে আলুর ডাল। এই খাবারটা রংপুরবাসীর খুব পছন্দের খাবার। সেই খাবারটি বেশি থাকে। এছাড়াও বেগুন ভর্তা, বিভিন্ন মাছের আইটেম দিয়ে দুপুরের খাবার খাই। আমার মাছ খুব পছন্দের খাবার। যে কোনো মাছই আমার খুব ভালো লাগে।
চ্যালেন আই অনলাইন: কোন খাবারটি এখন আপনি আর খান না?
এরশাদ: বয়স হয়েছে তাই মাংস বা মাংস দিয়ে তৈরি খাবার খুব বেশি খাই না বললেই চলে। তাই বিয়ে বাড়িতে যেতে আমার ভালো লাগে না। তবে গেলেও কোনো খাবার খাই না। এতো পরিমাণ তেল মসলা থাকে যে খাবারকে বিষ মনে হয়। অবশ্য বিয়ে বাড়িতে গেলে অনেক ছবি তোলা হয়। এখন তো আবার সেলফির যুগ।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনার সেলফি তুলতে ভালো লাগে না?
এরশাদ: হ্যাঁ, সেলফি তুলতে আমার ভালো লাগে। বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে সেলফি তুলতে আমার খুব ভালো লাগে। যেখানেই আমি যাই না কেনো মেয়েরা আমার সঙ্গে সেলফি তুলে। আমারও বেশ ভালো লাগে। ব্যাপারটা উপভোগ করি।
চ্যানেল আই অনলাইন: বিকেলটা কিভাবে কাটে?
এরশাদ: বিকেলে সাধারণতঃ তেমন কোনো কাজ থাকে না। আমার ছেলে এরিক এরশাদ গান গায়। ওর চারটি অ্যালবাম বাজারে এসেছে। বিকেলে বসে ছেলের গান শুনি। আর আমার ছেলে তো মান্না দের অনেক ভক্ত। ওনার গানও শোনা হয়। এছাড়া পুরনো দিনের সব শিল্পীর গান শুনতে পছন্দ করি।
চ্যানেল আই অনলাইন: অাপনার রাতের খাবারের মেন্যুতে কি থাকে?
এরশাদ: রাতে একটি রুটি খাই। আর ছেলের সঙ্গে রাতে গল্প করতে হয় বলে প্রতিদিন রাত ১১টায় ঘুমাতে যাই।
চ্যানেল আই অনলাইন: এখনো আপনি গলফ খেলেন?
এরশাদ: সপ্তাহে দুইদিন গলফ খেলি। শুক্রবার ও শনিবার জিম ট্রেইনার আসে না, সেই দুইদিন আমার কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে গলফ খেলি।
চ্যানেল আই অনলাইন: বাইরের কোন খাবারটি আপনার বেশি পছন্দের?
এরশাদ: সাধারণত বাইরের দামি খাবার ছাড়া আমি কিছু খাই না। বিফ স্টেকটা আমার পছন্দের খাবার।
চ্যানেল আই অনলাইন: পোশাকের তালিকায় আপনার বিশেষ পছন্দ কোনটি?
এরশাদ: পোশাকের মধ্যে স্যুট পরতে বেশি ভালো লাগে। এছাড়া কোনো অনুষ্ঠানে গেলে পাঞ্জাবি পরতে ভালো লাগে। রঙের ক্ষেত্রে নীল রঙটাই পছন্দ।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনার কোনো নিজস্ব পোশাক ডিজাইনার আছে?
এরশাদ: একসময় ছিলো। এখন নেই। বয়স হয়ে গেছে তো। তাই পোশাক ডিজাইনার লাগে না। আর বেশিরভাগ সময় উপহার পাই। এর বাইরে নিজে কিছু পছন্দ করে কিনি, এই দিয়েই হয়ে যায়।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনাকে সবসময় স্যুটের সঙ্গে স্কার্ফ পরতে দেখি।
এরশাদ: কোনো রহস্য নেই। এটা আসলে সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন সময়ে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো। অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। এখনো তাই স্যুটের সঙ্গে পরি।
চ্যানেল আই অনলাইন: বাইরের কোন দেশে ঘুরতে পছন্দ করেন?
এরশাদ: বাইরের দেশে ঘুরতে যাওয়া হয়। তবে লন্ডন আমার পছন্দ না। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর ঘুরতে বেশ ভালো লাগে। ছেলেকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে প্রায়ই যেতে হয়। সাজানো গোছানো পরিস্কার সিঙ্গাপুরে ঘুরে বেশি মজা পাই। এছাড়া ভারতে ঘুরতেও বেশ ভালো লাগে।
চ্যানেল আই অনলাইন: সর্বশেষ প্রশ্ন। বর্তমানে রাজনীতির অবস্থা কেমন দেখছেন?
এরশাদ: রাজনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। আগে রাজনীতিকরা দেশ কন্ট্রোল করতো আর এখন ছাত্ররা দেশ কন্ট্রোল করে। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে ছাত্রদের কাছে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। একজন ছেলে মোবাইল চুরি করেছে বলে তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। দেশে যেনো কোনো আইন নেই। যে যেভাবে পারছে; সে সেভাবে অপরাধ করে যাচ্ছে। তাই মনে করি মানুষের মধ্যে যতোদিন মূল্যবোধ সৃষ্টি না হবে ততোদিন দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না।