আজও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। গতকাল (ঈদের দিন) যে দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে, আজ সেই দামও পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অন্যদিকে, চাহিদা না থাকায় ছাগলের চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল ঈদের দিন রাজধানী ঢাকার মধ্যে দেওয়া কোরবানির পশুর চামড়া বেশি বেচাকেনা হয়েছে। তবে, আজ মূলত আড়তগুলোতে রাজধানীর বাইরে থেকেই বেশি চামড়া এসেছে।
পোস্তার আড়তদার মোখলেছুর রহমান রহমান বাদল বলেন, আজকে তুলনামূলকভাবে পশুর চামড়া কম এসেছে। ঢাকার বাইরের চামড়াগুলো আজকে লবণ ও লবণ ছাড়া দুইভাবে এসেছে। আজকের দাম গতকালের চেয়ে একটু কম।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল গরুর যে চামড়া সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি আজ ৫০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। যারা গতকাল চামড়া বিক্রি করতে পারেননি, সেগুলো আজ লবণ দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা। যারা লবণ দিয়ে আজ চামড়া নিয়ে এসেছেন, তাদের চামড়াও প্রায় অর্ধেকের একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। লবণযুক্ত এক লাখ টাকা গরুর চামড়া দাম কমপক্ষে ১১০০-১২০০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সর্বোচ্চ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে।
পোস্তা ছাড়াও ঈদের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে চামড়া বেচাবিক্রি হচ্ছে। সায়েন্সল্যাব মোড়ে চামড়া বাজারে আকারভেদে ঈদের দিন যে চামড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজ সেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। যদিও মৌসুমি চামড়া ক্রেতারা বলছেন, তারা আগের দামেই চামড়া কিনছেন।
এদিকে, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া বেশিরভাগ ক্রেতাই কিনতে চাইছেন না। কিনলেও ১০ বা ২০ টাকায় কিনছেন এসব চামড়া। একাধিক ছাগল ও ভেড়ার চামড়া রাস্তা, ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
পোস্তায় গরুর চামড়ার সঙ্গে ৩০টি ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছেন হামিদুল আলম। তিনি জানান, গরুর চামড়া আসল দামে বিক্রি করতে পারলেও ছাগলের চামড়ার কোনো দাম বলে না। এগুলো ফ্রি দিয়ে দিতে হবে, না হয় ফেলে দিতে হবে।
ছাগলের চামড়ার না কেনা প্রসঙ্গে আড়তদার মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, ঈদের সময় ছাগলের চামড়া কিনে তা প্রক্রিয়া করার মতো ট্যানারিতে জায়গা নেই। এজন্য ট্যানারিতে ছাগল-ভেড়ার চামড়া নিতে চায় না। আমরা কয়েকজন ২০০ পিস চামড়া কিনেছি। এগুলো এখন গলার কাটা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত রেটের অর্ধেক দামও বলছেন না ক্রেতারা।
দ্বিতীয় দিনেও মাঠে নেই তদারকি সংস্থা
চামড়া নিয়ে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা। গতকাল ঈদের দিনের মতো আজও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কম দামে চামড়া বেচাবিক্রি হচ্ছে। এরপরও গতকালকের মতো আজও সরকারি কোনো সংস্থাকে ওই এলাকায় বিষয়টি মনিটরিং করতে দেখা যায়নি। অবশ্য, পুলিশ সদস্যরা পোস্তা এলাকায় চামড়া বহনকারী যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা গেছে, কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ ও তদারকিতে পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সচিবের নেতৃত্বে সার্বিক ব্যবস্থাপনা তদারকি করতে থাকে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিটি, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিচালনা কমিটি, সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য কমিটি ও জেলা কমিটি করা রয়েছে।
এসব কমিটি মূলত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা তদারকির করে। সচিরের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি কাজ করে। এ ছাড়া, একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের বিভাগীয় কমিটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইআইটি অনুবিভাগের একজন উপসচিবের নেতৃত্বে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ দায়িত্ব পালন করে। পাশাপাশি ১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল সেল ও ২৯ জন সদস্য নিয়ে গঠিত জেলা কমিটি থাকলেও সরেজমিনে বাজার মনিটরিং কিংবা তাদের কোনো কার্যক্রম দেখেননি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া, চামড়ায় সিন্ডিকেট করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও আদৌতে বাজারে তদারকিতে তাদের পক্ষ থেকে কার্যক্রম চোখে পড়েনি।