বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ১৫ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক থাকার তথ্য সংসদে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পলাতক এসব আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাও অব্যাহত থাকার কথা বলেছেন সংসদ নেতা।
বুধবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়। সংসদের বিধি অনুযায়ী, টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পঠিত বলে গণ্য হয়।
সরকার দলীয় সাংসদ ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়াসহ সাজাপ্রাপ্ত ১৫ জন আসামি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। বিদেশে পলাতক অন্য আসামি মাওলানা তাজউদ্দীন, হারিছ চৌধুরী ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রশ্নোত্তরে জানানো হয়, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ৫২ জনকে আসামি করে দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে রায় ঘোষণার আগে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন। বিচারে ৪৯ জন আসামির সাজা হয়, যার মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। সাজাপ্রাপ্ত ৪৯ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংস্দ সদস্য হামিদুল হক খন্দকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তার সমীক্ষা সম্পন্ন করে পিডিপিপি (প্রাক প্রকল্প প্রস্তাব) প্রণয়ন করে ২০২০ সালের অগাস্টে ইআরডিতে পাঠানো হয়। ওই প্রকল্পের বিষয়ে চীন সরকারের মূল্যায়ন প্রতিবেদন ২০২৩ সালের ৫ মার্চ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়।
ওই প্রতিবেদনে বড় আকারের ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগ বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, চীন সরকার প্রকল্পটি পর্যায়ভিত্তিক বাস্তবায়নের জন্য আরও বিশদ সমীক্ষার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। পাওয়ার চায়না কর্তৃপক্ষ চীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৭ অগাস্ট সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন সংশোধনের প্রস্তাব বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অধিক বজ্রপাত প্রবণ ১৫টি জেলায় বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট প্রাণহানি রোধে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৭৯৩টি বজ্রনিরোধক ছাউনি স্থাপনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ১৫৩ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি কমাতে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ফেনী-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি হতে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৪ হাজার ৭১১টি (স্থানীয় ৪ হাজার ১৩০ এবং বৈদেশিক ৫৮১ টি) শিল্প প্রকল্পের নিবন্ধন দিয়েছে। যাতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ লাখ ৩০ হাজার মিলিয়ন টাকা। এতে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫৬ জনের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ২০২২ সালের জানুয়ারি হতে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৪৩ দেশ হতে ২৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ২০২২ সালের জানুয়ারি হতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরাসরি বিনিয়োগ হিসেবে ৬ হাজার ৪৮৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার পাওয়া গেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকার দলীয় সাংসদ চয়ন ইসলামের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে নারীবান্ধব বিভিন্ন নীতি-কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে নারী শিক্ষার্থীদের সুবিধা অনেক বেড়েছে। এতে নারী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষকের সংখ্যাও বেড়েছে।
ঢাকা-১৪ আসনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলার লক্ষ্যে চীনের সহযোগিতায় ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় এক একর জমির উপর একটি অত্যাধুনিক ‘ন্যাশনাল ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮ রিখটার স্কেলের অধিক ভূমিকম্প সহনীয় এ ভবন প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।