বিয়ের ২২ দিনের মাথায় খুন হলো সৌরভ । নদীতে পাওয়া গেলো ৪ টুকরো খন্ডিত লাশ

Slider বাংলার মুখোমুখি

সামদানি হোসেন বাপ্পী ময়মনসিংহ। গত ১২ মে চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভা ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে ওমর ফারুক সৌরভ কে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক ২ লাখ ২২ হাজার ২শত ২২ টাকা দেনমোহরের মাধ্যমে কাজী তাদের বিয়ে পড়ান । বিয়ের কয়েকদিন পর সৌরভের পিতা ময়মনসিংহ ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামের ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলীকে তার ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইলিয়াস আলী আকন্দ ফোনে সৌরভকে টুকরো টুকরো করে খুন করার হুমকিদেন । এরই প্রমান দিলেন সৌরভ কে ৪ টুকরা ও মাথা আলাদা করে ময়মনসিংহ সদরের মনতলা সুতিয়া নদীতে ফেলেদিয়ে । স্থানীয় এলাকাবাসী লাগেজ ও মাথা দেখে পুলিশকে খবরদেয়। ঘটনাস্থলে কোতোয়ালী পুলিশ, জেলা ডিবি পুলিশ ও সিআইডি গিয়ে লাগেজ উদ্ধার করে ৪ খন্ড লাশ দেখতেপান।

গত ২ জুন সকাল অনুমান সাড়ে ৮ টার দিকে কোতোয়ালী মডেল থানাধীন মনতলাস্থ সুতিয়াখালী নদীর ব্রীজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একটি লাগেজ ও পাশেই স্থলভাগে একটি মানুষের মাথা দেখতে পেয়ে স্থানীয় জনতা থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থল হতে মানুষের মাথা ও পাশেই পানিতে ভাসমান লাগেজ উদ্ধার করে লাগেজ খুলে চার টুকরা পুরুষের খন্ডিত অংশ পাওয়া যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকান্ডের বিষয়ে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম এর মুখমন্ডল, পড়নের কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট দেখে পরিচয় সনাক্ত করেন। সনাক্তকৃতদের পরিচয় থেকে জানা যায় ভিকটিমের নাম ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ তারাটি গ্রামের মোঃ ইউসুফ আলীর ছেলে । বর্তমানে পোষ্টার কলোনী, থানা-মতিঝিল, ডিএমপি ঢাকায় বসবাস করেন ।

এই সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-০৬, ২ জুন , ধারা-৩০২/৩০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু করা হয়। মামলা দায়েরের পর তথ্য প্রযুুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে যৌথ ভাবে ডিবি ও কোতোয়ালী পুলিশ ।
ধৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী ইলিয়াছ ও ডিসিষ্ট ওমর ফারুক সৌরভ পরস্পর আপন চাচা ভাতিজা। ইলিয়াছ এর মেয়ে ইসরাত জাহান ইভাকে ডিসিষ্ট ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) গোপনে বিয়ে করে। ইভার ৩ বছর পূর্বে অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। স্বামী কানাডায় থাকেন । সৌরভকে হত্যার কিছুদিন আগে স্টুডেন্ট ভিসায় ইভাকে কানাডায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১২ মে সৌরভ ইভার বিয়ের বিষয়টি পরবর্তীতে ইভার বাবা মা জানলে চরম ক্ষিপ্ত হয় এবং এই বিবাহ কোনক্রমেই মেনে নিবে না বলে জানায়। এই ঘটনা নিয়ে ইলিয়াছ এর আপন ভাই ইউসুফ (ডিসিষ্ট এর বাবা) এর সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। দুইজনের মধ্যে বাক বিতন্ডা হয় এবং ওমর ফারুক সৌরভকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

গত ২ জুন রবিবার বিকেলে ডিসিষ্ট ওমর ফারুক সৌরভ ময়মনসিংহে আসে এবং চাচাতো ভাই মৃদুল (১৭) (আসামী ইলিয়াছ এর ছেলে) কে ফোন দিলে, মৃদুল সৌরভকে কোতোয়ালী মডেল থানাধীন গোহাইলকান্দি (প্রাইমার স্কুল সংলগ্ন) বাসায় আসতে বলে। সৌরভ বাসায় গেলে চাচা ইলিয়াছ বাসার নিচ তলায় একটি ভাড়া করা কক্ষে নিয়ে হাত পা বাঁধে। আসামী ইলিয়াছ এর শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) কে ফোন করে ময়মনসিংহ বাসায় ডেকে নিয়ে আসে এবং এক পর্যায়ে দুজন মিলে সৌরভের মাথায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রাখে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা মাফিক ময়মনসিংহ গাঙ্গীনারপাড় হতে ট্রলি ব্যাগ (লাগেজ), পলিথিন ও হ্যান্ডগ্লাভস কিনে বাসায় নিয়ে যায়। বাথরুমে রাখা সৌরভ এর মৃত দেহ হতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা এবং দুই পায়ের ঊরু বিচ্ছিন্ন করে পলিথিনে প্যাকেট করে লাগেজের মধ্যে রাখে। মাথাটি স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে একটি শপিং ব্যাগে রাখে। ২ জুন তারিখ রাত অনুমান সাড়ে ১২টার সময় লাগেজ ও শপিং ব্যাগে রাখা মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে আসামী ইলিয়াছ আলী ও আহাদুজ্জামান ফারুক একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে ব্যাক ডালার ভিতরে করে কোতোয়ালী মডেল থানাধীন মনতলা ব্রীজের উপর হতে সুতিয়াখালী নদীতে ফেলে দেয়। মামলাটি কোতোয়ালী মডেল থানায় তদন্তাধীন রয়েছে।
চাঞ্চল্যকর ৪ খন্ড লাশের রহস্য উন্মোচন, হত্যাকারী গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধারে
এ সংক্রান্তে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং এ এসব তথ্য জানান । প্রধান আসামী ইলিয়াছ গ্রেফতারের পর অসুস্হ্য হয়ে পড়লে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় । আসামীরা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *