ভারতে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শেষে এবার শুরু হয়েছে ভোট গণনা। স্থানীয় সময় সকাল আটটায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৮টা) এই ভোট গণনা শুরু হয়।
বিজেপি নাকি কংগ্রেস, এনডিএ জোট নাকি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট; এই লোকসভা নির্বাচনে কারা বিজয়ী হয়ে নতুন সরকার গঠন করবে সেটা জানা যাবে আজই।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতে ছয় সপ্তাহব্যাপী ম্যারাথন নির্বাচনের পর মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোট গণনা শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায়। ভোট নেওয়া হয়েছে, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম দিয়ে, যার ফলে ভোট গণনা খুব দ্রুত শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বের সব চেয়ে বড় নির্বাচন বলে পরিচিত এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভোটার ছিলেন, যার মধ্যে ৬৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ ৫৪৩ আসন বিশিষ্ট লোকসভার জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। যে দল বা জোট ২৭২ বা তার বেশি আসন পাবে, তারা দেশের পরবর্তী সরকার গঠন করবে।
এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত দুটি জোটের মধ্যে- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং বিরোধী কংগ্রেসের মিত্রদের নিয়ে গঠিত ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
এনডিএ জয়লাভ করলে মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ জোট জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। বিরোধী জোট নির্বাচনী প্রচারণার সময় কোনও নেতাকেই তাদের ‘প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী’ হিসেবে উপস্থাপন করেনি।
এদিকে সাত দফার নির্বাচন গত শনিবার শেষ হওয়ার পরে যে এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত জনমত সমীক্ষা সংবাদমাধ্যম এবং সমীক্ষা সংস্থাগুলো করেছে, তাতে এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে বলে দেখা গেছে। তারা জানিয়েছে, এনডিএ হয় আগের বারের মতো ৩৫৩ (৬৫ শতাংশ) আসন পাবে বা তার থেকে আরও ১০ শতাংশ বেশি পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে।
কিন্তু প্রায় প্রতিটি বিরোধী দল এই সমীক্ষার বিরোধিতা করে বলেছে, এর কোনো ভিত্তি নেই এবং অতীতে অনেকবারই বুথ ফেরত জরিপ বা এক্সিট পোল ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩৭.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩০৩ আসনে জয়লাভ করেছিল। তার বিপরীতে কংগ্রেস ১৯.৬৬ পেয়ে মাত্র ৫২ আসন পায়। অন্য দলগুলোর অনেকেই নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থেকেছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসন, তামিলনাডুতে ডিএমকে ২৩টি আসন, অন্ধ্র প্রদেশে ইউভাজানা স্রামিকা র্যথু কংগ্রেস পার্টি ২৩টি আসন এবং মহারাষ্ট্রে শিব সেনা ১৮টি আসন পেয়েছিল।
মূলত এই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ‘এনডিএ’ একটানা তৃতীয়বার দেশটির ক্ষমতায় আসার জন্য লড়ছে। বিজেপির সেই লক্ষ্য সফল হলে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর নরেন্দ্র মোদিই হবেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি পরপর তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন।
অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের মূল জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারাও আশাবাদী তারা সরকার গড়ার জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার, তা অর্জন করতে পারবেন।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের সব চেয়ে বড় দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর দাবি করেছেন, তাদের জোট ২৯৫ বা তার কাছাকাছি আসন পাবে বলে তাদের ধারণা। সরকার গঠনের জন্য দরকার অন্তত ২৭২টি আসন।