ভারতের মুসলিম মহিলাদের এই প্রতিবাদী কণ্ঠ যেন মৌচাকে ঢিল মারার মতো৷ মৌখিক তিন তালাক প্রথা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক৷ এ বিষয়ে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যেও মতভেদ আছে৷ সুন্নি প্রথা অনুযায়ী, প্রতিটি তালাক বলার মাঝে তিন মাসের ব্যবধান থাকা উচিত৷ ফলে এর মধ্যে মিটমাট করে নেবার একটা সুযোগ থাকে৷ নিখিল ভারত সুন্নি উলেমা পরিষদ মনে করে, একসঙ্গে তিনবার তালাক বলা হলেও সেটিকে একবার বলে ধরা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার৷ মুসলিম ল বোর্ডের মতে, কোরান ও হাদিসে একসঙ্গে তিনবার তালাক বলা অপরাধ৷ কিন্তু একসঙ্গে বলে ফেললে বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হয়ে যায়৷ এই ব্যবস্থা বদলানো সম্ভব নয়৷ শিয়াদের মধ্যে মৌখিক তালাকের সময় দুজন করে সাক্ষী থাকার রেওয়াজ আছে৷
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয় মুসলিম মহিলা চান একতরফাভাবে তিনবার মৌখিক তালাকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের এই প্রথা বন্ধ হোক৷ বন্ধ হোক এক স্ত্রী থাকতে বহুবিবাহ প্রথা৷ এটা মুসলিম নারী সমাজের প্রতি অন্যায়, অবিচার৷ ৯৩ শতাংশ মুসলিম মহিলা দাবি জানিয়েছেন, তালাকের আগে সালিশি বা মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা হোক৷ মৌখিক তালাকের নোটিশ পাঠানোর জন্য ৮৯ শতাংশ মুসলিম মহিলা কাজি, উলেমা ও মৌলবিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন৷ ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন (বিএমএমএ) নামে মুম্বই-এর একটি স্বয়ংসেবী সংস্থা দুবছর ধরে বেশির ভাগ গরিব ও পিছিয়ে পড়া মুসলিম মহিলাদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, গরিব, পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের তালাক দেবার প্রবণতা বেশি৷ বিচ্ছেদের পর ঐ সব মুসলিম মহিলার জীবনে নেমে আসে ভয়ংকর বিপর্যয়৷ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তালাক সংক্রান্ত বিবাদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে শরিয়াত-ভিত্তিক মুসলিম পার্সোনাল ল বা মুসলিম পারিবারিক নিয়মবিধির সংহিতা বা সংকলন থাকা দরকার৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিয়ের বয়স, তালাক, বহুবিবাহ, ভরণপোষণ এবং সন্তানদের হেফাজত ইত্যাদি প্রশ্নে কোরানের কাঠামোর মধ্যে তা নথিভুক্ত থাকা দরকার৷ ঐ এনজিও-র মুখপাত্র নূরজাহান সোফিয়া নিয়াজ এবং জাকিয়া সোমান মনে করেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতীয় মুসলিম নারী সমাজ নিজেরাই নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে চান, অন্যরা নয়৷ দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম মহিলাদের হয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে আসছেন, যেটা ওদের মনপুত নয়৷ ওরা চান মুসলিম পার্সোনাল আইনের ব্যাপক সংস্কার৷ কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাখভি মনে করেন, সংখ্যালঘু ধনী পরিবারগুলি শরিয়ত আইন খুব একটা মেনে চলেন বলে মনে হয় না৷ শিক্ষার আলোই একমাত্র সচেতনতা আনতে পারে৷ মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড মৌখিক তিন তালাক নিয়ম বজায় রাখার কথা বললেও, সেটিই শেষ কথা নয়৷ এক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই, মনে করেন তিনি৷ ঐ এনজিও-র মতে, ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে নারীর অধিকারকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেয়া যায় না৷ তাই বিষয়টি তারা পেশ করবেন সরকার, আইন কমিশন এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে৷ নিখিল ভারত মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র মৌলানা ইয়াকুব আব্বাসের মতে, উলেমাদের উচিত একসঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা৷
সুত্রঃ ডয়েচে ভেলে