ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গাছ পড়ে, লাইন ছিঁড়ে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আবার দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো বিকল্প উপায়ে নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও ফোন জরুরি সেবার অন্তর্গত। দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এক কর্মকর্তা জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৫ লাখ ৬৯ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও ঝালকাঠি। পটুয়াখালীতে ৬ লাখ, বাগেরহাটে সাড়ে ৪ লাখ ও ভোলায় সোয়া ৪ লাখ, পিরোজপুরে ৩ লাখ, বরিশালে ১ লাখ ৮০ হাজার, সাতক্ষীরায় ১ লাখ ৭০ হাজার এবং ঝালকাঠিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রাতে আরও ৮-১০ লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওজোপাডিকোরও ২-৩ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যথাসময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি প্রয়োজনে বাতিল এবং অতিরিক্ত জনবল প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে ১৬৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গভীর সমুদ্রে তেল খালাস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে বলে বিপিসি সূত্রে জানা গেছে। নিরাপত্তার কারণে জ্বালানি তেলবাহী দুটি জাহাজকে গভীর সমুদ্রে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নৌরুটে তেল পরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে রিমালের কারণে এলএনজি সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না বলে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান। ওই কর্মকর্তা জানান, দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে (এফএসআরইউ) এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। রাতের মধ্যে ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, সাগরের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় শুক্রবার এলএনজি সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে শনিবার সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। কারণ এফএসআরইউ যেদিকে, রিমাল সেদিক দিয়ে যাচ্ছে না। তাই ক্ষতির আশঙ্কা কম।
একটি বিতরণ কোম্পানির সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে তা যতটা কমানো যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন নিয়মিত ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। তাই বিতরণ ব্যবস্থাপনা এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তা ঝড়েও টিকে থাকে। এ ছাড়া কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জেনারেটরের পাশাপাশি ব্যাটারির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে, যাতে দুর্যোগকালীন জরুরি প্রয়োজনে তা বিকল্প উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় উপকূলে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, উপকূলে ঝড় শুরুর আগে সন্ধ্যা বেলাতেই অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। টাওয়ারগুলোতে চার ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেছে। ঝড় থেমে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলে আবার নেটওয়ার্ক সচল হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত শুরু হয়েছে। রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত শুরু করে। পরে রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণপশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে উপকূলে ভারী বর্ষণের পাশাপাশি তীব্র বাতাস বইছে।