ধেয়ে আসছে রেমাল

Slider জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় রেমাল এখন বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ ছয় ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই তথ্য জানিয়েছেন কানাডাভিত্তিক আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ।

পলাশ জানান, বর্তমান অবস্থান থেকে সামনের দিকে সাগরের পানির তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত ১২টার মধ্যে রেমালের বাতাস সর্বোচ্চ শক্তি (ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার) অর্জন করতে পারে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বাইরের বৃষ্টি বলয় আজ ভোর ৪টা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা এবং বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর আঘাত হানা শুরু করেছে। এর ফলে এসব এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ৭ নম্বরে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গভীর নিম্নচাপ ( অবশ্য এ রিপোর্ট পাঠকদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন এটা ঘূর্ণিঝড় হয়ে যেতে পারে) কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ছিল ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

মংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, মংলা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ কারণে মংলা বন্দরে জারি করা হয়েছে নিজস্ব অ্যালার্ট-৩। এতে বন্দরে অবস্থানরত সব বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজসহ অপারেশনাল কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান গতকাল শনিবার রাতে বলেন, মংলা বন্দরের জেটিসহ পশুর চ্যানেলে নোঙর করা দেশী-বিদেশী ছয়টি বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধসহ ওই সব জাহাজকে নিরাপদ নোঙর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের অপারেশনাল সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ দিকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারির ফলে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, এরই মধ্যে ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের ওসি হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারির পর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের প্রতিটি স্টেশনসহ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে নৌযান চলাচল স্বভাবিক

ঘুর্ণিঝড় রেমালের কোনো প্রভাব এখনো পড়েনি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। লঞ্চ ও ফেরি চলাচল স্বভাবিক রয়েছে। নদীর গতিবিধিরও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সকাল ৬টার পর থেকে লঞ্চ চলাচলে ১ নম্বর সংকেত রয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় সকাল পৌনে ৭টায় দৌলতদিয়া ঘাট লঞ্চ ট্রাফিক কর্মকর্তা শিমুল জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে লঞ্চ চলাচলে এখনো কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। তবে আমাদের জন্য ১ নম্বর সতর্ক সংকেত রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নতুন কোনো সংকেত বা নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *