ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন ইতি (ছদ্ধনাম)। কিন্তু ভালোবাসার সেই সংসারটি ভেঙ্গে গেছে। একটি সন্ধ্যা তার জীবনকে ঘোর অন্ধকার করে দিয়েছে। ওই সন্ধ্যাতেই স্বামীর আসল চেহারা আবিষ্কার করেন ইতি। নিজ বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামীর দীর্ঘদিনের সম্পর্কটি সেদিনই ধরা পড়ে ইতির চোখে। ওই দিনই দুজনের দুটি পথ চিরদিনের মতো আলাদা হয়ে যায়। ভাবীর সঙ্গে দেবরের এই পরকীয়ার কারণেই ভেঙ্গে গেছে ইতির সাজানো সংসার। প্রেম, বিয়ে নাম শুনলেই ভয় পান ইতি। এই জীবনে আর প্রেম, বিয়ের সঙ্গে জড়াতে চান ত্রিশ ছুইঁ ছুইঁ এই নারী। এক কন্যাকে নিয়েই জীবনের বাকিটা পথ পাড়ি দিতে চান তিনি।
রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা ইতি। ২০১০ সালের ৯শে নভেম্বর বিয়ে হয় তার। তার আগের গল্পটা একটা প্রতারণার। ইতি তখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। পরিবার ও বান্ধবীদের সঙ্গে প্রায়ই কেনাকাটা করতে যান নিউমার্কেট। সেখানেই পরিচয় হয় আজাদের (ছদ্ধনাম) সঙ্গে। গায়ের রং কালো হলেও সুঠাম দেহ তার। নিজেকে দোকানের মালিক হিসেবে পরিচয় দেন আজাদ। সেইসঙ্গে ঢাকা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অর্নাস করছেন বলেও জানান তাকে। সহজ-সরল ইতি তার কথায় আকৃষ্ট হন। ইতি জানান, তার কথা বিশ্বাস করেছিলেন। পারিবারিকভাবে সমপর্যায়ের মনে করে তার সম্পর্কে আর খোঁজ নেননি তিনি। মোটরসাইকেল নিয়ে প্রায়ই ইতিদের বাসার আশপাশে উপস্থিত হতেন আজাদ। ইতিকে নিয়ে যেতেন পার্ক, লেক, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্নস্থানে। এভাবেই ভালোবাসা গভীর হয়। এরমধ্যেই বিষয়টি জেনে যান ইতির মা। অনড় ইতি। যেভাবেই হোক আজাদকে বিয়ে করতে চান তিনি। কিন্তু আজাদ ও তার পরিবার সম্পর্কে জানার পর কিছুতে মেয়েকে ওই পরিবারের পাঠাতে রাজি না তার মা। ইতিমধ্যে ইতি জানতে পারেন আজাদের মিথ্যাচার। যে দোকানের মালিক পরিচয় দিয়েছেন আজাদ তা তার নিজের না। সত্য হচ্ছে ওই দোকানের একজন কর্মচারী তিনি। যে মোটরসাইকেলটি নিজের বলে জানিয়েছেন সেটিও নিজের না। এতে ভীষণ কষ্ট পান ইতি। তবু মন ভাঙে না। আজাদ মিথ্যা বলতে পারে কিন্ত তার ভালোবাসা মিথ্যা না বলেই প্রবল বিশ্বাস ইতির। কিন্তু ইতির মা কিছুতেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন না। ইতির বাবা নেই। এই অবস্থায় কোন ভুল করতে চান না মা। ঘটে নাটকীয় ঘটনা। বিয়ে ঠিক করেন প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে। বিয়ে হয় ঠিকই। কিন্তু সন্ধ্যার পর কনে ইতির খোঁজ নেই। পালিয়ে গেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত একমাত্র কন্যার মুখের দিকে তাকিয়ে ওই বিয়ে ভেঙে দিতে বাধ্য হন ইতির মা। বিয়ে হয় আজাদের সঙ্গে। ইতি বলেন, এই সিদ্ধান্তটাই আমার জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছে। যদিও বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। বিয়ের ছয় মাস পরে সৌদি আরবে চলে যান আজাদ। ২০১১ সালের ২২শে নভেম্বর এক কন্যা সন্তানের মা-বাবা হন এই দম্পতি। এরমধ্যেই সৌদি থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য শ্বাশুড়ির কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবি করেন আজাদ। একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য টাকা দেন তিনি। এর কিছু দিন পর আজাদ দেশে ফিরে জমি কেনার জন্য ৮ লাখ টাকা ধার চাইলে তাও দেন ইতির মা। আজাদ তখন ভাড়া বাসা নেয় শ্বশুড়বাড়ির পাশে হাজারীবাগ এলাকাতেই। এভাবে আরও কয়েক বছর কেটে যায়। গত ৫ই এপ্রিল। সবচেয়ে বড় ঝড় আসে ইতির জীবনে। ওই বাসায় তখন আজাদের প্রবাসী বড় ভাইয়ের স্ত্রী শোভা। কিছু সময়ের জন্য ইতি বেড়াতে এসেছিলেন তার মায়ের বাড়িতে। স্বামীকে না জানিয়েই বিকালে বাসায় ফিরেন। দরজার পাশে যেতেই অন্যরকম একটা শব্দ পেয়ে চমকে উঠেন তিনি। এই বাসায় তার স্বামী ও জ্যা ছাড়া কেউ থাকার কথা না। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন সম্পর্ক কল্পনাও করতে পারেন না ইতি। দরজা খোলা ছিলো। কিন্তু ভেতরের দুটি কক্ষে কোন আলো নেই। একটি কক্ষকে টার্গেট করেই আস্তে পা ফেলেন ইতি। ওই কক্ষের দরজা সরাতেই আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। জ্যা ও স্বামীকে মারতে উদ্যত হন ইতি। তখন উল্টো স্বামীর মারধরের শিকার হন তিনি। সেদিন বেদম প্রহার করেন ইতিকে। বিষয়টি কাউকে জানালে প্রাণেমেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেন আজাদ। সন্তানকে কোলে নিয়ে বাসায় চলে যান ইতি। চিৎকার করে কাঁদেন। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারেন না। একসময় ইতির মা বিষয়টি বুঝতে পারেন। স্বামীর মারধরে আহত ইতিকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে গত ২৩শে এপ্রিল হাজারীবাগ থানায় মামলা করেন ইতি। অভিযোগ করেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরও।
ইতি বলেন, ওই দৃশ্য দেখার পর সংসারের সাধ আমার মরে গেছে। আমি তাকে চাই না। আমি চাই আমার মায়ের টাকা ফেরত দিক। আমার সন্তানের ভরষ-পোষন দিক। তবে মনেপ্রাণে চাই আমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য তার শাস্তি হোক। ইতি জানান, মামলার প্রধান আসামি বিদেশে পলাতক। যারা দেশে আছে তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না।