দীর্ঘদিন ধরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ২৭ ধরনের সেবায় কর অব্যাহতি সুবিধা দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সুবিধাপ্রাপ্ত সেবাগুলোর তালিকায় আরও নতুন কিছু খাত অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি, কিছু খাতকে পুনরায় করজালের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১১ সাল থেকে আইটি সেবার ওপর কর অব্যাহতি দিয়ে আসছে এনবিআর। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর করে এই কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩০ জুন এই অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিছু কিছু খাতের সেবায় কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থাৎ সেগুলোতে আর করমুক্ত সুবিধা থাকছে না।
বর্তমানে কর অব্যাহতি সুবিধার আওতায় রয়েছে— সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্তিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিক্স, গ্রাফিক্স ইনফরমেশন সার্ভিস (জিআইএস) ও আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস।
এই সুবিধার আওতায় আরও রয়েছে, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং অ্যান্ড ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবোটিক প্রসেস আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিং।
এর মধ্যে আগামী বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তত ৮-১০টি খাতের সেবায় কর বসানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি, ব্লকচেইন ও রোবোটিক্সসহ অন্তত পাঁচ ধরনের সেবায় কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের শ্লোগানে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই আইটি সেক্টরে কর সুবিধা দিয়ে আসছে। প্রতি বছর নিত্য নতুন খাত এর আওতায় আসছে। তবে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাজস্ব আদায়ও জরুরি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কর আদায় ও কর অব্যাহতি দেওয়া হবে। বর্তমানে করমুক্ত সেবার আওতায় থাকা ৮-১০টি খাতে কর আরোপের চিন্তাভাবনা রয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তাই সেবাগুলোর নাম বলা ঠিক হবে না। এতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এদিকে, কর অব্যাহতি ছাড়াও ভ্যাটের ক্ষেত্রেও হ্রাসকৃত ভ্যাট সুবিধা পেয়ে আসছে আইটি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। বিভিন্ন পণ্য ও সেবা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হলেও আইটি খাতের ওপর বর্তমানে ভ্যাট রয়েছে ৫ শতাংশ। অবশ্য আগামী অর্থবছরে এ খাতের ভ্যাটের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তনের বিষয়ে জানা যায়নি।
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে আইটি খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। ওই বছর নতুন করে চার বছরের জন্য তা বাড়ানো হয়, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রযুক্তি খাতে বছরে স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। আর রপ্তানির পরিমাণ ১.৯ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এ খাতে ৭২ মিলিয়ন ডলার নতুন বিনিয়োগ এসেছে।