বিব্রতকর ব্যাটিং প্রদর্শনীর পর ১৫৩ রান তুলেছিল আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ বাংলাদেশ। সহযোগী ও নবীন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেই রান ডিফেন্ড করতে পারলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। হারমিত সিং ও কোরি অ্যান্ডারসনের ৬২ রানের জুটিতে ইতিহাস গড়ে স্বাগতিকরা টাইগারদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে। প্রথমবারের মতো দুই দল কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার পর লজ্জায় পুড়লেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।
আর মাত্র ১০ দিন পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। যুক্তরাষ্ট্রে আগে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় বাংলাদেশ কিছুটা সংশয়ে ছিল উইকেট ও কন্ডিশন নিয়ে। তবে স্লো আউটফিল্ড ও পিচ কিছুটা মিরপুরের মতো মনে হয়েছে, কিন্তু ঘরের মতো মাঠ পেয়েও টাইগাররা ব্যাটিং করেছে যাচ্ছেতাই। তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া সেভাবে কেউ রান পাননি। তবুও অভিজ্ঞ টাইগার পেসারদের কল্যাণে জয়ের আশাই করছিল টাইগার সমর্থকরা। কিন্তু সেই আশা গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচসেরা হারমিত সিং মাত্র ১৩ বলেই করেছেন ৩৩ রান। মুস্তাফিজ-শরিফুলদের ছয় হাঁকিয়ে যেন তাদের অভিজ্ঞতাকে থোড়াই কেয়ার করলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। অন্যপ্রান্তে বাউন্ডারি পেতে ধুঁকছিলেন নিউজিল্যান্ড ছেড়ে আমেরিকান দলটির হয়ে খেলতে নামা কোরি অ্যান্ডারসন, শেষ পর্যন্ত তিনিও করলেন ২৫ বলে ৩৪ রান। তাতেই ৩ বল হাতে রেখে নিশ্চিত হয়ে গেল বিশ্বকাপ আয়োজকদের স্মরণীয় জয়।
বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৪ রানের মাঝারি মানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন স্বাগতিক ওপেনাররা। ৩ ওভারে ২৭ রান তোলার পর যুক্তরাষ্ট্র অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল (১০) শরিফুলের দুর্দান্ত থ্রো–তে রান আউট হয়ে যান। তবুও টি-টোয়েন্টির মেজাজ ধরে রেখে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার স্টিভেন টেলর ও অ্যান্দ্রিস গুস। ১৮ বলে ২৩ রান করা গুসকে ফেরান রিশাদ হোসেন।
এরপর ১৩ রানের ব্যবধানে স্বাগতিকরা আরও দুই উইকেট হারায়। ২৮ রানে টেলর এবং অ্যারন জোন্সকে ৪ রানে ফেরান ফিজ। তাতে স্বাগতিকরা চাপে পড়ে রানের গতি কমিয়ে দেয়। পরে ৯৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় যুক্তরাষ্ট্র, ১০ রান করা নিতীশ কুমারকে আউট করেন শরিফুল। এরপর অ্যান্ডারসন ধীরগতিতে খেললেও, বাউন্ডারি খেলে তাতে ভারসাম্য বজায় রাখেন হারমিত। তাদের সেই জুটিই ইতিহাসগড়া জয় এনে দেয় স্বাগতিকদের।
ক্রিকেট বিশ্বে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় আপসেটের দেখা পেল বাংলাদেশ। অথচ এই দলটাই বিশ্বকাপে নতুন কিছু এনে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশটিতে পা রেখেছিল। অন্যদিকে, নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পেল যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়বারের মতো আইসিসির কোনো পূর্ণ সদস্য দেশকে হারাল তারা। এর আগে ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ পেয়েছিলেন প্যাটেল–আলী খানরা।
টাইগারদের হয়ে মুস্তাফিজ ২টি এবং রিশাদ ও শরিফুল একটি করে উইকেট পেয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ, অচেনা কন্ডিশন, পিচ সম্পর্কেও ধারণা ছিল না বাংলাদেশের। এমন মাঠে বলের মতিগতি বুঝতেই খেই হারিয়েছেন সফরকারী ব্যাটাররা। ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের বাজে শুরু এবং এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসানরা অনেক সংগ্রামের পরও রান পাননি। শেষ পর্যন্ত হৃদয়ের ফিফটি (৫৮) ও মাহমুদউল্লাহর (৩১) ক্যামিওতে টাইগাররা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান তোলে।