তদন্ত কমিটিতে মেয়েসহ জলিল, শিশু ইয়াসিন মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

Slider টপ নিউজ


গাজীপুর: আচরণ বিধি ভঙ্গ করে শোডাউন করার সময় গাড়ি চাপায় শিশু ইয়াসিন হত্যা ও এই কারণে আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আ: জলিল ও তার মেয়ে ঝর্ণা আক্তার। এদিকে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে শ্রীপুর থানায় মামলা( মামলা নং ২৩(০৫)২৪) করেছেন নিহতের মা মিমি আক্তার(২৮)।

আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সামনে যথাসময়ে হাজির হন আ: জলিল ও তার মেয়ে ঝর্ণা আক্তার। তারা তাদের বক্তব্য পেশ করেন। এসময় অভিযোগের বাদী আশিক বিন ইদ্রিছও তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য নিয়ে তদন্ত কমিটি পুলিশের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির কোন সদস্য কোন মন্তব্য করেননি। তবে দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মামলায় কাউকে আসামী করা হয়নি। কিন্তু গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শিশু ইয়াসিন হত্যার ঘটনায় আসামীদের পরিচিতি ও বিভিন্ন সূত্র পর্যালোচনা করে এই মামলার আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। একই সাথে মামলার আসামী আনারস প্রতীকের শেডাউনের লোক হলে গাড়ির চালক সহ সহযোগী আসামীদের গ্রেপ্তার ও আচরণ বিধি লঙ্গনের অভিযোগে প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যববস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তী সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন খুব দ্রুতই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে সূত্রের দাবী।

এ বিষয়ে জানতে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেনকে ফোন দিলে তিনি মিটিং-এ আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান। তবে পুলিশের সূত্র বলছে, শিশু ইয়াসিন মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত পরিবহন আইনের মামলার আসামী শনাক্ত ও ঘাতক গাড়ি জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। যে কোন সময় ভালো খবর আসতে পারে।

১৫ মে শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টায় আনারস প্রতীকের শোডাউন চলাকালে ইয়াসিন(৪) নামে একটি শিশু শোডাউনের গাড়ি চাপায় নিহত হয়। এই ঘটনায় ১৬ মে আ: জলিলের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি ভঙ্গ করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রার্থীতা বাতিল ও ফৌজদারী আইনে হত্যা মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করা হয়। এ্ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার ও ইলেকট্রোরাল ইনকুয়ারী কমিটির নিকট একটি আবেদন করেন শ্রীপুর উপজেলার ভিটিপাড়া গ্রামের আশিক বিন ইদ্রিছ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ১৮ মে সকাল ৯টায় শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে আ: জলিলকে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার কথা বলা হয়।

আবেদনে বলা হয়, ১৫ মে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শ্রীপুরে গাড়ি বহর যোগে শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করে আনারস প্রতীকের পক্ষে রাস্তায় শোডাউন করার সময় গাড়ির ধাক্কায় ইয়াসিন(৪) নামে একটি শিশু মারা যায়। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ এবং ২১(২) ধারা লংঘন হয়েছে যা ৩৩ ধারা মোতাবেক জনাব আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল হতে পারে। একই সঙ্গে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের হতে পারে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রচারকার্যে যানবাহন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ: কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যাক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান (ক) কোন ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল বা অন্য কোন প্রকারের মিছিল বাহির করিতে পারিবে না কিংবা কোনরুপ শোডাউন করিতে পারিবে না।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুই ঘটিকার পূর্বে এবং রাত আট ঘটিকার পরে করা যাইবে না। এই বিধান লংঘন করলে ৩৩ ধারা মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতা বাতিল করতে পারবে।

প্রসঙ্গত: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার(১৫ মে) সকাল পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন মুলাইদ এলাকার শফিকের মোড়ে মজিবুরের বাড়ীর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম ইয়াসিন (৪)। সে গাজীপুর মহানগরীর হাতিয়াব এলাকার কাতার প্রবাসী জহিরুল ইসলামের ছেলে। শিশুটি তার মায়ের সাথে শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ গ্রামের নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। এই ঘটনায় অস্যখ্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *