গাজীপুর: আচরণ বিধি ভঙ্গ করে গাড়ি চাপায় শিশু হত্যার অভিযোগে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আ: জলিলের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। শনিবার(১৮ মে) সকাল ৯টায় স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ করেছে তদন্ত নির্বাচন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি।
আজ শুক্রবার রাতে এই তথ্য জানান শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো: আল নোমান। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটির পক্ষ থেকে ১৮ মে সকাল ৯টায় আ: জলিল ও অভিযোগকারীকে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৫ মে শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টায় আনারস প্রতীকের শোডাউন চলাকালে ইয়াসিন(৪) নামে একটি শিশু শোডাউনের গাড়ি চাপায় নিহত হয়। এই ঘটনায় ১৬ মে আ: জলিলের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি ভঙ্গ করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রার্থীতা বাতিল ও ফৌজদারী আইনে হত্যা মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করা হয়। এ্ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার ও ইলেকট্রোরাল ইনকুয়ারী কমিটির নিকট একটি আবেদন করেন শ্রীপুর উপজেলার ভিটিপাড়া গ্রামের আশিক বিন ইদ্রিছ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ১৮ মে সকাল ৯টায় শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে আ: জলিলকে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, ১৫ মে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শ্রীপুরে গাড়ি বহর যোগে শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করে আনারস প্রতীকের পক্ষে রাস্তায় শোডাউন করার সময় গাড়ির ধাক্কায় ইয়াসিন(৪) নামে একটি শিশু মারা যায়। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ এবং ২১(২) ধারা লংঘন হয়েছে যা ৩৩ ধারা মোতাবেক জনাব আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল হতে পারে। একই সঙ্গে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের হতে পারে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রচারকার্যে যানবাহন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ: কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যাক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান (ক) কোন ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল বা অন্য কোন প্রকারের মিছিল বাহির করিতে পারিবে না কিংবা কোনরুপ শোডাউন করিতে পারিবে না।
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুই ঘটিকার পূর্বে এবং রাত আট ঘটিকার পরে করা যাইবে না।
এই বিধান লংঘন করলে ৩৩ ধারা মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতা বাতিল করতে পারবে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, আচরণ বিধিমালায় যেহেতু শোডাউন নিষিদ্ধ এবং বেলা দুইটার আগে শব্দযন্ত্র ব্যবহার নিষেধ, তাই সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আনারস প্রতীকের পক্ষে শব্দের মাত্রা বর্ধধনকারী হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী আ: জলিল আচরণ বিধিমালা লঙন করেছেন। একই সঙ্গে আচরণ বিধিমালা লঙন করতে গিয়ে একটি হত্যাকান্ড সংঘটিতও হয়েছে। আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন করলে হয়ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত নাও হতে পারত। এই ক্ষেত্রে অসাবধানতা বশত শব্দটির জায়গায় সচেতনভাবে আইন ভেঙ্গে হত্যাকান্ড সংঘটন করা হয়ে থাকতে পারে বলা যাবে কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। বিষয়টি তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নিলে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বাক্যটি অর্থহীন হয়ে যাবে। কারণ আচরন বিধি লঙন করে হত্যাকান্ড গুরুতর অপরাধ এবং তা আইনে প্রমানিতও বটে। এই ক্ষেত্রে নিহত শিশুটির পক্ষে তার পরিবার মামলা করলেন কি করলেন না সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। নিহতের পরিবার মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে এটাই আইনের বিধান। প্রসঙ্গত: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার(১৫ মে) সকাল পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন মুলাইদ এলাকার শফিকের মোড়ে মজিবুরের বাড়ীর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম ইয়াসিন (৪)। সে গাজীপুর মহানগরীর হাতিয়াব এলাকার কাতার প্রবাসী জহিরুল ইসলামের ছেলে। শিশুটি তার মায়ের সাথে শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ গ্রামের নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল।