মন্তব্য কলাম: শ্রীপুরে আ: জলিলের প্রার্থীতাও বাতিল যোগ্য?

Slider টপ নিউজ


রিপন আনসারী, গাজীপুর: আগামী ২১মে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন। এরই মধ্যে একাধিকবার আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসান দুর্জয়ের প্রার্থীতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। একই দিন সকালে নির্বচনী আচরণ বিধি ভেঙ্গে যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার করে শোডাউন করার সময় আনারস প্রতীকের গাড়ি বহরের ধাক্কায় নীচে পড়ে একটি চার বছরের শিশু নিহত হয়েছে। ঘটনা সঠিক হলে আর আইন সবার জন্য সমান হলে আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আ: জলিলের প্রার্থীতাও বাতিল হতে পারে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রচারকার্যে যানবাহন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ: কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যাক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান (ক) কোন ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল বা অন্য কোন প্রকারের মিছিল বাহির করিতে পারিবে না কিংবা কোনরুপ শোডাউন করিতে পারিবে না। এই বিধান লংঘন করলে ৩৩ ধারা মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতা বাতিল করতে পারবে।

খবরে বলা হয়েছে, আজ ১৫ মে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শ্রীপুরে গাড়ি বহর যোগে শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করে আনারস প্রতীকের পক্ষে রাস্তায় শোডাউন করার সময় গাড়ির ধাক্কায় একটি শিশু মারা যায়। গাড়ি বহরে প্রার্থী ছিলেন, না তার মেয়ে ছিলেন এটা আইনে বিবেচ্য বিষয় নয়। আইনে বলা হয়েছে, প্রার্থীর পক্ষে শোডাউন করা যাবে না। যান্ত্রিক যানবাহনও ব্যবহার করা যাবে না। বেলা দুইটার আগে মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রও ব্যবহার করা যাবে না।
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুই ঘটিকার পূর্বে এবং রাত আট ঘটিকার পরে করা যাইবে না।

আচরণ বিধিমালায় যেহেতু শোডাউন নিষিদ্ধ এবং বেলা দুইটার আগে শব্দযন্ত্র ব্যবহার নিষেধ, তাই সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আনারস প্রতীকের পক্ষে শব্দের মাত্রা বর্ধধনকারী হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী আ: জলিল আচরণ বিধিমালা লঙন করেছেন। একই সঙ্গে আচরণ বিধিমালা লঙন করতে গিয়ে একটি হত্যাকান্ড সংঘটিতও হয়েছে। আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন করলে হয়ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত নাও হতে পারত। এই ক্ষেত্রে অসাবধানতা বশত শব্দটির জায়গায় সচেতনভাবে আইন ভেঙ্গে হত্যাকান্ড সংঘটন করা হয়ে থাকতে পারে বলা যাবে কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। বিষয়টি তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নিলে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বাক্যটি অর্থহীন হয়ে যাবে। কারণ আচরন বিধি লঙন করে হত্যাকান্ড গুরুতর অপরাধ এবং তা আইনে প্রমানিতও বটে। এই ক্ষেত্রে নিহত শিশুটির পক্ষে তার পরিবার মামলা করলেন কি করলেন না সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। নিহতের পরিবার মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে এটাই আইনের বিধান। কারণ আমাদের দেশে অনেক হত্যাকান্ডের বাদীও হত্যায় জড়িত থাকতে পেরেছেন বা হত্যাকান্ডের পর বাদী বা বাদীপক্ষ কথিত বেআইনী আপোষও করতে পেরেছেন বলে অসংখ্য উদাহরণ বিদ্যমান। অনেক সময় হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিতে বাদী পক্ষও আইনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে এমন ঘটনা বিরল নয়। আবার হত্যামামলার বাদীও হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে বলেও নজীর আছে। সুতরাং আইন লংঘন করে শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার পরিবার মামলা করলেন না করলেন না, সেটা আইনে বিবেচ্য বিষয় নয়। প্রয়োজনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারে এটাই আইন। নিহতের পরিবার বা পুলিশ যেই মামলা করুক মূলত হত্যাকান্ড একটি গুরুতর অপরাধ যা বিচার অপরিহার্য্য বটে। এই ক্ষেত্রে যে কোন ব্যাক্তি বা মানবাধিকার সংগঠন বা নির্বাচন কমিশনও বাদী হয়ে আচরণ বিধি ভঙ্গ করে হত্যাকান্ড সংঘটনের মামলা করতে পারে। একই সঙ্গে আচরণ বিধি ভঙ্গ করে হত্যাকান্ড সংঘটিত করার অপরাধে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ৩৩ ধারা মোতাবেক জনাব আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল করতে পারে।

প্রসঙ্গত: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার(১৫ মে) সকাল পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন মুলাইদ এলাকার শফিকের মোড়ে মজিবুরের বাড়ীর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম ইয়াসিন (৪)। সে গাজীপুর মহানগরীর হাতিয়াব এলাকার কাতার প্রবাসী জহিরুল ইসলামের ছেলে। শিশুটি তার মায়ের সাথে শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ গ্রামের নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিলের স্বজনরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে কয়েকটি গাড়ি যোগে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ (শফিক মোড়) শ্রমিক লীগ নেতা মজিবুরের বাড়ীর সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌছালে শিশুটি গাড়ি চাপায় গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে অবস্থা গুরুতর হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সোহেল রানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে থানা পুলিশকে কেউ অবহিত করেনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, শুনা যাচ্ছে বিষয়টি সংবেদনশীল ও গুরুতর অপরাধ। অভিযোগ প্রাপ্তী সাপেক্ষে তদন্ত করে সঠিক পাওয়া গেলে আচরণ বিধি লংঘন ও ফৌজদারী আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *