রমজান আলী রুবেল ,শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি: প্রচন্ড দাবদাহে মানুষ নয় পুরো প্রাণী কুলের জীবন উষ্ঠাগত। বৃহস্পতিবার (১মে) বিকেলে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ঘুরে দেখা গেছে খড় তাপে নাকাল পার্কের পশু পাখি। পার্কের নালা,লেক,পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে সংকটে পড়েছে জলহস্তি আর বাহারী মাছ। যতে উৎফুল্লা হতির পাল। আফ্রিকান সাফারির বেশীর ভাগ প্রাণীরা রোদের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ঠাঁই নিয়েছে বনের অপেক্ষা কৃত ঠান্ডা ছায়া যুক্ত স্থানে। বাঘ-সিংহ-ভাল্লুক কাঠফাটা রোদে হাফাচ্ছে। প্রাণীদের সুরক্ষায় প্রনান্ত কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। আসার কথা এখনো কোন প্রাণী দাবদাহে অসুস্থ্য হয়ে পড়েনি।
জানাযায়, টানা দাবদাহের কারণে পার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা একেবারেই কমেগেছে। খড়তাপের প্রভাব পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশের পশু পাখি পার্কের পরিবেশ মানিয়ে নিয়েছে। টানা খড়তাপে এসব প্রাণীরা অনেকটাই নাকাল হয়ে পেছে। প্রখড় রোদে পুড়ে যাচ্ছে মাঠের ঘাস। শুকিয়ে যাচ্ছে পার্কের নালা,লেক,খাল,পুকুরের পানি। এতে অনেক ক্ষেত্রে পানির সংকট দেখা দেয়। কতৃপক্ষ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করেছে সাবমরসিবল পাম্প। বিভিন্ন বেষ্টনিতে স্থাপ করা হয়েছে জলাধার। আফ্রিকান সাফারিতে থাকা জিরাফ,জেব্রা,ওয়াইল্ডবিষ্ট, নীল গাই,গয়াল,হরিণ প্রখড় রোদে নিজেকে রক্ষা করতে ঠাঁই নিয়ে থাকে বনের ভেতর অপেক্ষা কৃত ছায় যুক্ত স্থানে। নিজেকে শান্ত করতে কখনোবা বাঘ হরিণ লাফিয়ে পরে জলাধারে। বাঘ-ভাল্লুক-সিংহের বেষ্টনীতে নেই বন বা ছায়যুক্ত গাছ। সেডের বাইরে এসব প্রাণী উন্মোক্ত মাঠে রোদ-বৃষ্টিতে বিচরণ করে।
দাবদাহে হিংশ্র প্রাণীকুল নাকাল হয়ে পরেছে। সেডে নিচে ক্লান্ত ভাল্লুককে হাঁফাতে দেখাযায়। বাঘ-সিংহ গুলো বেষ্টনীর ভেতর থাকা দু’একটি গাছের ছায়ায় নিজেকে রক্ষার চেষ্টাকরে। কখনোবা লেকের পানিতে লাফিয়ে পরে নিজেকে শান্ত করে। জলহস্তির বেষ্টনীতে লেকের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। স্থানে স্থানে ভেসে উঠেছে লেকের তলা। এক পাশের অপেক্ষাকৃত গভীর স্থানে ঠাঁই নিয়েছে জলহস্তি। যে টুকু পানি আছে তাতেই শরির ডুবিয়ে শান্ত থাকে তারা। বেশ ক’দিন ধরে জলহস্তিকে একই স্থানে অবস্থান করতে দেখা যায়। লেকের পানিতে ভাসতো বাহারী মাছ। এসব রঙ্গীন মাছ দেখে শিশু কিশোররা বেশী আকৃষ্ট হতো। লেকের পার ভেঙ্গে ভরাট হওয়ায় কমে গেছে পানি। এতে রঙ্গীন মাছ গুলো অস্তিত সংকটে পরে। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্টরা মাছ গুলো নিরাপদ স্থানে সংরক্ষন করছে।
পার্কে বর্তমানে আটটি হাতি রয়েছে। ঘন সবুজ বন বেষ্টিত স্থানে হাতি শালা। পড়ন্ত বিকেলে উৎফুল্ল হাতি গুলো শুড় নেড়ে মাথা দুলে রাতের খাবার খাচ্ছে। হাতির পালক কোকিল জানান, দাবদাহের কারণে হাতি গুলো প্রদর্শিত হয়না। সেডের ভেতর তাদের যতœ নেয়া হয়। হাতিকে দিনে তিনবার খাবার দেয়া হয়। সকালে কুমড়া,কলা,গাঁজর,আখ। দুপুরে ভুষি,ভুট্টা ভাঙ্গা। বিকেলে ভূট্টা ঘাস, কলা গাছ দেয়া হয়। দাবদাহ থেকে রক্ষা করতে দিনে ৩/৪বার হাতিকে গোসল দেয়া হয়।
সহকারী বন সংরক্ষক ও পার্কের ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পার্কে পানির সংকট দূর করতে সাতটি সাবমারসিবল পাম্প বসানো হয়েছে। প্রতিটি সেডে ভেতর জলাধার স্থাপন করা হয়েছে। জলহস্তির লেকে পানি দিলেও তা প্রচন্ড রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে। লেকের পানি কমে যাওয়ায় রঙ্গীর মাছগুলো নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশে মাছ গুলো ফের লেকে ছাড়া হবে।
এছাড়া সিসি কেমেরার মাধ্যমে প্রতিটি প্রানীর উপর দৃষ্টি রাখা হয়। আফ্রিকান সাফারির বাঘ-সিংহ-ভাল্লুকের চলাচল সর্বক্ষন সিসি কেমেরায় পর্যবেক্ষন করা হয়। প্রতিটি পশু-পাখিকে মান সম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রচন্ড দাবদাহে এখনো কোন প্রাণী অসুস্থ্য হয়নি। আমরা পার্কের কর্মরতরা দিন রাত কাজ করছি। প্রাণী গুলোকে নিরাপদে সুস্থ্য রাখতে নিরলশ চেষ্টা করছি। তবে শংকায় রয়েছি বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে প্রাণী গুলোকে কতোটা সময় নিরাপদ রাখতে পারবো।