হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ মে) খুলছে না দেশের মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নাকি বন্ধ এ ব্যাপারে অফিসিয়ালি (দাপ্তরিক) কিছু জানাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে আগামীকাল নিজেদের মতো বন্ধের নোটিশ দিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
তাপমাত্রা বেশি এমন ২৭ জেলায় মঙ্গলবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নাকি বন্ধ এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্তা না পাওয়ায় দোটানায় আছেন শিক্ষকরা। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে শুধু ২৭ জেলাই নয়, বৃহস্পতিবার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেছেন, বুধবার (৩০ এপ্রিল) শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে পরিষ্কার বক্তব্য দিয়েছেন। যেহেতু আদালত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেছেন তাই আপাতত আদালতের আদেশ মানা হবে। হাইকোর্টের আদেশের কপি না পাওয়া এবং সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার মত সময় না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ইস্যুতে ‘নো কমেন্ট’ অবস্থানে থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকি করার দপ্তর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ জাফর আলী বলেন, আদালত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলেছেন। সরকার যদি আপিলও করে সেই আপিলের শুনানি হয়ে রায় হতে হতে আগামীকাল স্কুলের কর্মঘণ্টা শেষ হয়ে যাবে। তাই আপাতত বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পক্ষেই আমাদের মত।
এব্যাপারে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা আগামীকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছি।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রুকনুজ্জামান শেখ বলেন, আগামীকাল স্কুল খোলা রাখা না রাখার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনও নির্দেশনা পাইনি। তাই হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আগামীকাল স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি এপ্রিলজুড়ে একদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত বন্ধ রাখতে আদালত নির্দেশ দিলেও বুধবার (১ মে) বিকেল পর্যন্ত লিখিত আদেশ পাওয়া যায়নি। তাই আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা আপিল করিনি। যেহেতু তারা একটি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমরা আপিল করিনি তাই বৃহস্পতিবার স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকছে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানান, আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেহেতু বিষয়টি আদালতের আদেশ, এই মুহূর্তে মন্তব্য করবো না। আমরা এখন পর্যন্ত দাপ্তরিকভাবে, সুনির্দিষ্টভাবে অবগত নই। আগে আদেশ টা দেখি। শুধু ঢাকার প্রভাবশালী অভিভাবকদের দাবির মুখে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ঠিক হবে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার শুধু ২৭ জেলাই নয়, সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মঙ্গলবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ১৮ জেলা, ঢাকা বিভাগের ৬ জেলা, রংপুরের ২ জেলা এবং বরিশালের এক জেলাসহ মোট ২৭ জেলার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে। বাকি ৩৭ জেলায় মাধ্যমিকের সব প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নাকি বন্ধ এ ব্যাপারে পরিষ্কার কোনও নোটিশ না দেওয়ায় হাইকোর্টের আদেশ মেনে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
তবে শিক্ষকরা বলছেন, আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা পাইনি। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে নাকি বন্ধ থাকবে এ নিয়ে দোটানায় আছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি শুরু হয়। এর একদিন আগে ২৫ মার্চ কলেজগুলো বন্ধ হয়েছিল। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ছুটি শুরু হয়েছিল ২২ মার্চ। পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শেষে গত ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। তবে দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দীর্ঘ ছুটি শেষেও খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।