বগুড়ায় বোরো ধানের সোনালী রঙে কৃষকের প্রাণভরা হাসি

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

হাবিবুর রহমান (হাবিব), ধুনট( বগুড়া) : বগুড়ায় মাঠের পর মাঠ সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের চোখে মুখে ছড়াচ্ছে হাসির ঝিলিক। ৪০ ভাগ ধানই কাটার উপযোগী হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে কেউ ধান কাটছে। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বৃষ্টি না থাকায় ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার কৃষকরা।

প্রকাশ থাকে যে, বৈরি আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বগুড়ার ১২টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪ শত ৩২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারা দেশে ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনের উদ্বৃত্ত জেলা হিসাবে বগুড়ার খ্যাতি রয়েছে। জেলার মাঠ গুলো এখন সোনালী রঙে অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো মৌসুমরে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছনে। তাই কৃষকরে মনে দোলা দিচ্ছে খুশির আমজে। বগুড়া অঞ্চলে বর্তমানে বিপুল পরিমাণে শাকসবজির উৎপাদন শুরু হলেও কৃষি অর্থনীতির চাকা সচলে মুখ্য ভুমিকায় থাকে বোরো ধান। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও বর্গা চাষি এবং কৃষি শ্রমিক মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকার সংগ্রাম চলবে মাসব্যাপি।জেলার বিভিন্ন উপজেলার বোরো ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়-প্রায় বোরো জমির ধান পেকে সোনালী রঙে শোভা ছড়িয়ে দুলছে জমিতে। পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক-শ্রমিক। শ্রমিকের পাশাপাশি ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ও রিপার মেশিন।বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জামাদারপুুকর এলাকার কৃষক আব্দুল বারিক জানান, নানা প্রতিকূলতার পরও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এবার বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার ধকল, তারপর দফায় দফায় কৃষি উপকরণের বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে কৃষককে। তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে মিনিকেট জাতের ধান আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন ৭০ মন ধান ঘরে তুলতে পারবেন। যদি বাজারে ধানের ন্যায্য মূল্য পান এতে তার খরচ বাদে লাভ হবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের কৃষক মুসা মন্ডল জানান গত মৌসুমের চেয়ে এবার চাষাবাদে বিঘাপ্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কৃষি উপকরণের বাড়তি দর আর বৈরী আবহাওয়ার ধকল থাকলেও শেষ মুহূর্তে কাঙ্খিত ফলন হয়েছে। এবার শ্রমিক মজুরী বেশি। ১ বিঘা জমির ধান কাটতে প্রায় ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এতে প্রতি বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক মজুরী দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। তবে নতুন ধান হাটে তোলার পর ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কৃষি কর্মকতা ফবিদুর রহমান ফরিদজানান চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩২ মেট্রিকটন। অর্জন হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৫০ হেক্টর। জেলায় চলতি মৌসুমে অন্তত ১২ থেকে ১৩ জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে উফসি জাতের ধান চাষ হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে হাইব্রিড ও স্থানীয়সহ অন্যান্য জাতের ধান চাষ হয়েছে। বগুড়ায় এ পর্যন্ত ধান কাটার উপযোগী হয়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশ। বৈশাখের শেষ সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া, সহায়ক ধানের জাত নির্বাচন আর কৃষকদের আধুনিক কলাকৌশল প্রদান করায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে। জেলার কিছু কিছু স্থানে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *