তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই খুলছে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। রোজা, ঈদ এবং তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিনের লম্বা ছুটি শেষে ফের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ।
তবে প্রচণ্ড গরমের কারণে বাচ্চাদের নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। সেজন্য রোদ ওঠার আগেই সন্তানকে পৌঁছে দিচ্ছেন স্কুলের আঙিনায়। একইসঙ্গে গরমে সুস্থ থাকতে দিচ্ছেন নানা উপদেশ। আবার তাপপ্রবাহে ক্লাসের বাইরে বের না হতে, মাঠে খেলাধুলা না করতে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি না করার জন্যও সতর্ক করতে দেখা গেছে অনেককে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল সাতটায় সরেজমিনে রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের সামনে ঘুরে দেখা যায়, অভিভাবকরা তাদের সন্তান নিয়ে স্কুলে আসছেন। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ছয়টার দিকেই চলে এসেছেন অনেকে। আবার স্কুল গেটে পৌঁছে ভেতরে প্রবেশের আগেও গরমে বাইরে খেলাধুলা না করার জন্য সন্তানকে উপদেশ দিয়ে সতর্ক করছেন। সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন পানি, জুস। কিছুসময় পরপর পানি পান করতেও বলে দিতে দেখা যায় অনেককে।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তীব্র গরমের মধ্যে স্কুল না খুলে অনলাইন ক্লাসের প্রতি জোর দেওয়া যেত। সকালে রোদ না থাকলেও গরম হওয়ার কারণে এমনিতেই ঘেমে যেতে হচ্ছে। আর কিছু সময় পর যখন রৌদ্র উঠবে তখন অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। আরো দুই থেকে তিন দিন বন্ধ বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বাসায় রাখতে পারলে ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেন তারা।
আব্দুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, গরমে বাসা থেকে এই পর্যন্ত আসতেই হাঁপিয়ে উঠেছে। স্কুল-কলেজ খোলা রাখলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন ছিল। ছোট বাচ্চারা এমনিতেই অসুস্থ হয় বেশি। গরমে বাসায় ফ্যানের নিচে সার্বক্ষণিক থাকলেও তারা অসুস্থ বোধ করে। সেজায়গায় এখন বাচ্চাদের বিষয়টি কিছুটা বিবেচনা করা যেত।
আফতাবুন নাহার নামের আরেক অভিভাবক বলেন, কিছুটা উদ্বিগ্নতা তো কাজ করেই। ছোট বাচ্চাদের যতই নিষেধ হোক না কেন দৌড়াদৌড়ি কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলা করবেই। সেজন্য স্কুলের ভেতরে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে শিক্ষকদের। বাচ্চারা যেন শ্রেণিকক্ষ থেকে বাইরে বের না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর শিক্ষকদেরকেই কিছুসময় পরপর পানি পান করানো কিংবা বিশ্রামের বিষয়টিও দেখতে হবে।
মোহাম্মদ আলী নামের আরেক অভিভাবক বলেন, আমার বাচ্চা একটু বেশি চঞ্চল প্রকৃতির। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ওর ক্লাস হবে। গরমে দৌড়াদৌড়ি না করার জন্য নিষেধ করে দিয়েছি। অনেকদিন ছুটির পরে স্কুল খুলেছে। আবহাওয়া বা বাইরের পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে। তবে বাচ্চাদের স্কুলে আনার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করলেই ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেন এই অভিভাবক।
অপরদিকে তাপপ্রবাহে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি দিক-নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো-
>> এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
>> দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোর ১ম শিফট সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।
>> প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
>> তাপপ্রবাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।