একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে নগর জীবনে ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি করেছে। জুনের আগে কাজ শেষ করার তাগিদে একযোগে রাজধানীর অনেক সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। মাটি ফেলে রাখা হচ্ছে সড়কেই। ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। সাথে রাস্তা সরু হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। এসব সড়ক দিয়ে চলতে ভোগান্তির যেন অন্ত নেই নাগরিকদের।
রাজধানীর মতিঝিল, টিকাটুলি, ইত্তেফাক মোড়, বঙ্গভবনের পশ্চিম দিকের রাস্তা, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি, সেগুনবাগিচা, কমলাপুর, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, হাজীপাড়া, বাসাবোসহ রাজধানীর অনেক সড়কে একযোগে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।
গত জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে রাস্তা কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ির কাজ, এখনো চলছে। কোথাও ঢাকা ওয়াসার, কোথাও-বা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) কাজ চলছে। আবার কিছু সড়কে চলছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে নগর কর্তৃপক্ষের কাজ। এসব পরিষেবা সংস্থার কাটাকাটি-খোঁড়াখুঁড়িতে যান চলাচল দূরে থাক, হাঁটাই দায়! কখনো ধুলো, কখনো কাদায় ভীষণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। শুধু তাই নয়, এলাকায় বায়ুদূষণের মাত্রাও অনেক বেড়ে গেছে। সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও রয়েছে রাজধানীবাসী, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। নিতান্ত বাধ্য হয়েই প্রতিদিন এসব পথে আসা-যাওয়া করছেন কর্মজীবী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। জানা গেছে, রাস্তা সংস্কার করতে আরো এক থেকে দুই মাস লাগতে পারে। অর্থাৎ এমন ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেশ কিছুদিন ভোগ করতে হবে নগরবাসীকে।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল। শাপলা চত্বর থেকে কমলাপুরগামী মেট্রোরেলের কাজ এখনো চলমান। এর মধ্যে শাপলা চত্বর থেকে টিকাটুলি যাওয়ার পথে সড়কের মাঝ বরাবর রাস্তা কেটেছে ডিপিডিসি। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাটি ভরাট করা হলেও এখনো পিচ ঢালাই করা হয়নি। এছাড়া কয়েকটি স্থানে রাস্তা আড়াআড়ি কেটে রাখায় সেখানে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ইত্তেফাক মোড় থেকে হানিফ ফ্লাইওভারগামী টিকাটুলি সড়কের পূর্ব পাশে রাস্তা কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গভবনের পশ্চিম পাশের সড়কেও রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ চলছে। সেগুনবাগিচায় গত কয়েক মাস থেকেই অলিগলির সড়কে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব সড়কে ড্রেনের কাজ শেষ করে ঢালাই দিলেও এখনো রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না করায় গাড়ি ও পথচারী চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সর্বশেষ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সামনের সড়কেও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে রাস্তা কেটে পাশেই মাটির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদপুর। এ এলাকায় রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৩ এই পাঁচটি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক রাস্তা রয়েছে। এগুলোর প্রায় অর্ধেকেরই করুণ দশা। যেসব রাস্তা কাটা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ইকবাল রোডের অধিকাংশ গলি, তাজমহল রোড, হুমায়ুন রোড, টিক্কাপাড়া, মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি, শেখেরটেক, আদাবর, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের আশাপাশে, শেরশাহসুরি রোডসহ এসব রোডের বিভিন্ন গলি। মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর সড়ক মিলেছে শেখেরটেক সড়কে। দুই সড়কের সংযোগ সড়কটিতে সিটি করপোরেশনের কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে চার মাস আগে। গতকাল শুক্রবারও দেখা গেছে ড্রেনেজের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আদাবর, শেখেরটেক এলাকার প্রতিটি বাড়ির সামনের রাস্তা কাটা।
ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কের কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। একবার ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া (ডিএমএ) কাজ করার সময় রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল। সেই রাস্তা সংস্কারের কয়েক মাস পর শুরু হয়েছে বাড়িতে বাড়িতে ডিএমএ সংযোগ দেয়ার কাজ। এ জন্য প্রতিটি বাড়ির সামনের রাস্তা সরু করে কাটা হয়েছে। এতে রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন নির্বিঘে্ণ চলতে পারে না। মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া এলাকায় ওয়াসার কাজ শেষ হতে না হতেই চলছে ডেসকোর কাজ। সরকারি এই সেবা সংস্থাটি মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক ক্যাবল নিয়ে বাড়ি বাড়ি মিটারে সংযোগ দিচ্ছে। এ জন্য রাস্তা কাটতে হচ্ছে। আর সিটি করপোরেশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আলাদা করে কেটেছে। ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় মোট ৩১টি প্যাকেজে কাজ চলছে। ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে রাস্তা ও ফুটপাথ সংস্কারের এই কাজ আগামী মে মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় ওয়াসা ও ডিপিডিসির বিভিন্ন কাজ চলছে। এছাড়া ডিএসসিসির নিজস্ব কিছু উন্নয়ন কাজও রয়েছে। আগামী জুন মাসের আগেই এসব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য এখন কাজ বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে কিছু ভোগান্তি হলেও না করে উপায় নেই। এজন্য জনগণকে ভোগান্তির বিষয়টি একটু মানিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।