ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল

Slider সারাবিশ্ব


একটি ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র আজ শুক্রবার ভোরে ইরানের একটি টার্গেট করা স্থানে আঘাত হেনেছে বলে এবিসি নিউজ জানিয়েছে। এছাড়া সিরিয়া ও ইরাকেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইরানি মিডিয়ার খবরে ইসফাহান বিমানবন্দরের কাছে হামলার কথা জানিয়েছে। ইরান তার দেশের বেশ কয়েকটি স্থানের বিমান চলাচল স্থগিত করেছে।

ইরানি বিমানবন্দর ও বিমান চলাচল কোম্পানির খবর অনুযায়ী, তেহরান, ইসফাহান ও শিরাজ বিমানবন্দরের বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।

ইরানি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সক্রিয় করা হয়েছে।

ইরানের ফার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসফাহান নগরীর বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে এর কারণ জানা যায়নি।

সংবাদ সংস্থাটি জানায়, বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।

এবিসির খবরে বলা হয়, মধ্য ইরানের ইসফাহানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আর দক্ষিণ সিরিয়ার আস-সুওয়াদা এলাকা এবং ইরাকের বাগদাদ ও বাবিল এলাকায় শুক্রবার সকালে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

খবরে বলা হয়, ফ্লাইট ট্র্যাকারগুলো ইরানের দিকে কয়েকটি ফ্লাইটের তাদের পরিকল্পিত রুট বদলের খবর দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি আমিরাতি ফ্লাইটও রয়েছে।

ইসরাইলি হামলা ছিল ‘সীমিত’
ইরানের ইসফাহান নগরীটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কাছাকাছি এলাকায় ইরানি পরমাণু কর্মসূচি-সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে।

তবে ইসরাইল ওইসব স্থানে আঘাত হানেনি।
ফক্স নিউজ ঘনিষ্ঠ সামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হামলাটি ছিল ‘সীমিত।’

সিরিয়ায় সেনাবাহিনীর স্থাপনাগুলোকে বিমান হামলার টার্গেট করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ইরাকের ইরবিল ও মসুলের অধিবাসীরা জানিয়েছেন, তারা শুক্রবার সকালে যুদ্ধবিমানের শব্দ শুনেছেন।

গত শনিবার রাতে ইসরাইলের ভেতরে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব ইসরাইল দেবে বলে ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে এসব বিস্ফোরণ হলো। আর ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে কথিত ইসরাইলি হামলার জবাবে ইরান ওই আক্রমণ চালিয়েছিল।

সূত্র : আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল, জেরুসালেম পোস্ট

ইরানের হুঁশিয়ারি : ইসরাইলের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা হবে
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, সপ্তাহান্তে ইসরাইলে তেহরানের আক্রমণের প্রতিশোধের কথা ভেবে ইরানের রিভ্যোলিউশানারি গার্ডসের একজন ঊর্ধ্বতন জেনারেল ইসরাইলকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, তারা যদি ইরানের পরমাণু ক্ষেত্রে আক্রমণ করে তা হলে ইরান ইসরাইলের ‘পারমানবিক স্থাপনাগুলিকে’ লক্ষ্য করে আঘাত হানবে।

ইরানের ওই হামলার বিরুদ্ধে ইসরাইল পাল্টা জবাব দেবার সংকল্প ব্যক্ত করে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ৭ অক্টোবর আক্রমণ চালানোর সাথে সাথে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শনিবার রাতে ইসরাইলের ওপর তেহরানের প্রথম সরাসরি আক্রমণ ছিল ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলার প্রতিশোধ। ওই হামলায় ইরানে রিভ্যোলিউশানারি গার্ড কোরের দু’জন জেনারেলসহ সাতজন সদস্য প্রাণ হারান।

ইরানের আক্রমণের প্রতিশোধ কোথায় কিংবা কবে নেয়া হবে সে সম্পর্কে ইসরাইলি কর্মকর্তারা কিছু জানাননি। তবে এই গার্ড বাহিনীর পারমাণবিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান আহমাদ হাঘতালাব বলেন, ইরান পরমাণু ক্ষেত্রের ্পর যেকোনো আক্রমণের পাল্টা জবাব দেবে।

ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ হাঘতালাবকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘এই ইহুদিবাদী সরকার [ইসরাইল] যদি আমাদের পরমাণু কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় তারা নিশ্চিতভাবেই আমাদের প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে। পাল্টা আক্রমণে উন্নত অস্ত্রের সাহায্যে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হবে।’

ইরানের শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘নিজেকে রক্ষা করার অধিকার ইসরাইলের আছে।’ আর তার পর পরই ইরানের তরফ থেকে এই সতর্কবার্তা এলো।

হাঘতালাব বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইলি আক্রমণের হুমকির কারণে তেহরানকে ‘তার ঘোষিত পারমাণবিক নীতি ও বিবেচনা থেকে সরে এসে তা নতুন করে ঠিক করতে হতে পারে।’ তিনি অবশ্য বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

এই ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি বরাবর বলে এসেছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি হচ্ছে শান্তিপূর্ণ এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির কথা অস্বীকার করেছে। তারা অবশ্য তাদের জাত-শত্রু ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের স্থাপনাগুলোর ওপর নাশকতামূলক আক্রমণ চালানোর জন্য এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করার অভিযোগ এনেছে।

২০১৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই বলেছিলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারত। কিন্তু তা করবে না। কারণ ইসলামে এ জাতীয় অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের অন্যান্য কর্মকর্তা বলেছেন যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অব্যাহত সম্প্রসারণে মনে হয় যে তাদের সামরিক উদ্দেশ্য আছে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি খর্ব করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত এক ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এক তরফাভাবে বেরিয়ে আসে।

তখন থেকেই ইরান ২০১৫ সালের চুক্তিতে দেয়া শর্ত অনুযায়ী তার প্রতিশ্রুতি থেকে ক্রমশই সরে এসেছে। ওই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার কুটনৈতিক প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে থমকে আছে এবং কিছু নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপ করা হয়েছে।

হাঘতালাবের মতে, ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রগুলোকে ইরান চিহ্নিত করেছে এবং ‘সকল লক্ষ্যস্থল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য’ তাদের কাছে আছে।

ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে তা সকলেরই জানা। কিন্তু ইসরাইল কখনো তা স্বীকার করেনি।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *