‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬’ দ্রুত আইন আকারে পাস করতে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৫ পৃষ্ঠার এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর এ রায় প্রকাশিত হয়।
নওগাঁর মিজানুর রহমানকে পুকুর খনন বন্ধ করতে ভূমি অফিসের নোটিশ অবৈধ ঘোষণার এই রায়ে আদালত বলেছেন, ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিধিনিষেধ আরোপ করে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬-এর খসড়া প্রণয়ন করা হলেও কোনও এক অজানা কারণে এটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশের কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ইত্যাদি সুরক্ষার জন্য আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদ থেকে পাস হওয়া আবশ্যক।
রায়ে আদালত আরও বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২(১) অনুযায়ী সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কেবল সংসদ থেকে প্রণীত আইন দ্বারা নাগরিকের উপরোল্লিখিত সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনে বিধিনিষেধ আরোপ তথা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২(১) এর মর্মার্থ। সুতরাং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। কোনোভাবেই ওই অধিকার পরিবর্তনে বাধা দেওয়া যাবে না।
আদালত বলেন, নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনের অধিকারে পরিবর্তন, বিধিনিষেধ এবং যেকোনও ধরনের নিয়ন্ত্রণ কেবল সংসদ থেকে প্রণীত আইনের মাধ্যমে করতে হবে।
এ কারণে রায়ে আদালত ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬’ দ্রুত আইন আকারে পাসে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়েছেন।
পাশাপাশি জাপান ও ফিনল্যান্ডের প্রণীত আইন যতটুকু সম্ভব অনুসরণ ও সমন্বয় করে আমাদের দেশের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি ‘দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নামে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের নিমিত্তে দ্বীপ উন্নয়ন আইন দ্রুত প্রণয়নের জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওই রায় ও আদেশের অনুলিপি জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে ই-মেইলে পাঠাতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুশুম্বা ইউনিয়নের ভূমি অফিস নোটিশ দিয়ে মো. মিজানুর রহমানকে পুকুর খনন বন্ধ করতে বলে এবং ‘বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০’ অনুযায়ী কেন দরখাস্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়। এই নোটিশের বিরুদ্ধে মিজানুর রহমান পুকুর খননের অনুমতি চেয়ে একই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত করেন।
তবে জেলা প্রশাসক আবেদনটি নিষ্পত্তি না করায় মিজানুর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পুকুর খনন বন্ধে নোটিশ কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২ জুন পুকুর খনন বন্ধে নোটিশ বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলেন হাইকোর্ট।