মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের চলমান যুদ্ধে গোলার বিকট শব্দ আবারও ভেসে আছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে। এই নিয়ে বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন।
অন্যদিকে যুদ্ধে টিকতে না পেরে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) রাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে দেশটি নিরাপত্তা বাহিনীর আরও ৪৬ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বিজিবির সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গতরাতে নতুন করে আরও ৪৬ বিজিপি সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে ২৬০ জন বাংলাদেশে অবস্থান গ্রহণ করছে। তাদের ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এদিকে, বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় রাখাইনে বোমা ও মর্টারশেলের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের আশপাশে গোলার শব্দে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
সীমান্তবর্তী পৌরসভার এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে এই সীমান্তে এতই গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বাড়ির পাশে যুদ্ধ চলছে। মাঝখানে বন্ধ থাকলেও বুধবার সকাল থেকে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’
সীমান্তের বসবাসকারীরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই ও গোলাগুলির শব্দে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্ষ্যংয়ের উত্তর পাড়া, লম্বাবিল, উলুবনিয়া, জিম্মখালী ও নয়াবাজার, হ্নীলা, শাহপরীর দ্বীপ, পৌরসভার জালিয়া পাড়াসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হন সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ইয়াছিন বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে সীমান্তের লোকজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। নাফ নদের সীমান্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘সকাল থেকে সীমান্তে ভারী গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। অন্যদিনের তুলনার আজকের গোলার শব্দ বিকট।’
এদিকে, মিয়ানমার মংডু ও বুথেডংয়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সবসময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের সদরদফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, ‘রাখাইনে সংঘাতের কারণে কিছু বিজিপির সদস্য এপারে আশ্রয় নিয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমরা নাফ নদ সমুদ্রেপথে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার রেখেছি। পাশাপাশি যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।’‘
এদিকে, এর আগে রাখাইনে চলমান সংঘর্ষে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সেনাসহ ৩৩০ জন বিজিপির সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানো হয়। এ ছাড়া গত ১১ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন ১৭৯ জন মিয়ানমার বিজিপি সদস্য। এ নিয়ে ২৬০ জন বাংলাদেশে অবস্থান গ্রহণ করছে। তাদের ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।