শুরু হয়েছে বৈশাখ মাস, ঝলমলে রোদ আর কালবৈশাখীর আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। জেঁকে বসেছে বজ্রপাতের আতঙ্কও। বৈশাখ শুরুর আগেই গত সপ্তাহে (৭ এপ্রিল) নয় জেলায় বজ্রপাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে মোট মারা যান ৩৪০ জন। স্বাভাবিকভাবে চলতি বছরেও বজ্রপাতে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের পরই পুরোদমে শুরু হচ্ছে বোরো ধান কাটা। এ সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ খোলা মাঠে কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকবেন। ফলে বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকছেই।
অভিযোগ উঠেছে, বজ্রপাতে কৃষকদের মৃত্যু ঠেকাতে প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। ত্রাণ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রকল্পগুলো যেন জলে গেছে! এর মধ্যে একটি প্রকল্প মাঝপথে বাতিল করা হয়েছে। অন্যগুলো তেমন কার্যকর নয়। বজ্রপাত থেকে রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা, মাঠে মাঠে বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ এবং উঁচু ও দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগানোর দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বজ্রপাতে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মৃত্যুই হয় বাংলাদেশে। দেশে প্রতি বছর গড়ে বজ্রপাতে ২৬৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। অর্থাৎ বজ্রপাতে শহরের চেয়ে মাঠে-ঘাটে থাকা মানুষের বেশি মৃত্যু হয়। শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪০৭ জনের
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএফের) তথ্য অনুযায়ী, বজ্রপাতে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মৃত্যুই হয় বাংলাদেশে। দেশে প্রতি বছর গড়ে বজ্রপাতে ২৬৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। অর্থাৎ বজ্রপাতে শহরের চেয়ে মাঠে-ঘাটে থাকা মানুষের বেশি মৃত্যু হয়। শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪০৭ জনের।
জ্রপাতে প্রাণহানির এ সংখ্যার বিচারে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করে ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।
জানা গেছে, বজ্রপাতে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ২০২১ সালে। ওই বছর মারা যান ৩৬৩ জন। এ ছাড়া, ২০২০ সালে ২৩৬ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন এবং ২০১৫ সালে মারা যান ১৬০ জন।
ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও এসএসটিএফের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বজ্রপাতে প্রথম মৃত্যু হয় ১৫ মার্চ। ডিসেম্বর পর্যন্ত মারা যান ২৪৫ জন। এর মধ্যে বজ্রপাতের মৌসুম মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত মারা যান ৮৬ জন। তাদের মধ্যে শুধু কৃষিকাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হয় ৫৭ জনের। নৌকায় থাকা অবস্থায় বা মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান ১১ জন। বাকিরা রাস্তা বা অন্যান্য স্থানে মারা যান।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আবহাওয়াবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নেওয়া হয়। কিন্তু ৩৮ লাখ তালের আঁটি লাগানোর পর চারা গজায়নি। আবার কিছু তালগাছ মারা যায়। একটি তালগাছ বড় হতে প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় লাগে। এত লম্বা সময় ধরে একটা গাছ পরিচর্যা করা সম্ভব নয়। ফলে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়
এবিএম সফিকুল হায়দার, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
দেশে মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত (নয় মাস) বজ্রপাতের দেখা মেলে। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৮৪ লাখের বেশি বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৬ সালের ১২ মে দেশের ১২টি জেলায় সর্বোচ্চ ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটে বজ্রপাতে। ওই দিন কালবৈশাখীর সঙ্গে সারাদেশে ঝড়-বৃষ্টি হয়। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করা এসএসটিএফের গবেষণা সেলের প্রধান আবদুল আলীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়া এবং গ্রামাঞ্চলে গাছ কেটে ফেলার কারণে মূলত বজ্রপাত বেড়েছে। খোলা মাঠ বা হাওরে তো কোনো গাছ থাকে না। থাকলেও তা কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় থাকা কৃষকদের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। একইভাবে গবাদি পশুরও মৃত্যু হচ্ছে।’
শত কোটি টাকার প্রকল্প জলে
দেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়। বজ্রপাত প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়। ব্যয় করা হয় বিপুল অঙ্কের অর্থ। অথচ বজ্রপাতে মৃত্যুর হার যেন ঠেকানো যাচ্ছে না। সেভাবে সুফল না পাওয়ায় ইতোমধ্যে ‘তালগাছ লাগানো প্রকল্প’ মাঝপথে আটকে গেছে। এর আগেই এ প্রকল্পের শত কোটি টাকা গচ্চা গেছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বজ্রপাত ঠেকাতে ২০১৭ সালে দেশব্যাপী ১০ লাখ তালগাছ লাগানোর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা ওই সময় যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, বজ্রপাত সাধারণত উঁচু কোনো কিছুতে আঘাত করে। এটা ঠেকাতে উঁচু উঁচু গাছ লাগানো উত্তম। এজন্য তালগাছ, নারকেল ও সুপারি গাছের কথা ভাবা হয়। এর মধ্যে তালগাছ লম্বা সময় ধরে বেঁচে থাকে। ফলে তালগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সহযোগিতায় বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ নামে আরেকটি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এর মাধ্যমে ৫৪ ঘণ্টা আগেই বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়ার কথা থাকলেও কৃষক ও জেলেদের কাছে এ ধরনের প্রযুক্তি সহজলভ্য না হওয়ায় এটিও খুব বেশি কাজে আসছে না
প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালে ১০ লাখ তালগাছের চারা ও ৩৫ লাখ আঁটি রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু যথাযথ পরিচর্যা না থাকায় কোথাও কোথাও চারাগুলো মারা যায়, নষ্ট হয়ে যায় আঁটিগুলোও। বিষয়টি ধরা পড়ে ২০২২ সালে। এরপর প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এ সময়ে প্রকল্পের পেছনে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় হয়। যার পুরোটাই গচ্চা যায়। তালগাছের পর দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ১৯০০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়। যা একনেকে পাসের অপেক্ষায় আছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এবিএম সফিকুল হায়দার এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আবহাওয়াবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নেওয়া হয়। কিন্তু ৩৮ লাখ তালের আঁটি লাগানোর পর চারা গজায়নি। আবার কিছু তালগাছ মারা যায়। একটি তালগাছ বড় হতে প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় লাগে। এত লম্বা সময় ধরে একটা গাছ পরিচর্যা করা সম্ভব নয়। ফলে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।
একই বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানতে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের আটটি স্থানে বসানো হয় রাডার (লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর)। প্রকল্পের ধারণাপত্রে বলা হয়েছিল, বজ্রপাত হওয়ার ১৫ মিনিট আগে ওই এলাকার মানুষদের তথ্য জানিয়ে দেওয়া যাবে। সেই প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি। অথচ পুরো অর্থই ব্যয় করা হয়।
সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সহযোগিতায় বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ নামে আরেকটি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এর মাধ্যমে ৫৪ ঘণ্টা আগেই বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়ার কথা থাকলেও কৃষক ও জেলেদের কাছে এ ধরনের প্রযুক্তি সহজলভ্য না হওয়ায় এটিও খুব বেশি কাজে আসছে না।
বাংলাদেশে সাধারণ কোনো প্রকল্প পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চললে একসময় তা ঝিমিয়ে পড়ে। একটি তালগাছ বড় হতে লাগে ২৫-৩০ বছর। এত সময় ধরে কে এটার রক্ষণাবেক্ষণ করবে? তাই আমাদের পরামর্শ ছিল হাওরে ফাঁকা জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র ও টাওয়ার স্থাপন করে লাইটনিং প্রটেকশন সিস্টেম বসানো। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে তালগাছ ও নারকেল গাছ লাগানো যেতে পারত
আবদুল আলীম, গবেষণা সেল-প্রধান, এসএসটিএফ
এসব প্রকল্পের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসএসটিএফের গবেষণা সেলের প্রধান আবদুল আলীম ঢাকা পোস্টেকে বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ কোনো প্রকল্প পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চললে একসময় তা ঝিমিয়ে পড়ে। একটি তালগাছ বড় হতে লাগে ২৫-৩০ বছর। এত সময় ধরে কে এটার রক্ষণাবেক্ষণ করবে? তাই আমাদের পরামর্শ ছিল হাওরে ফাঁকা জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র ও টাওয়ার স্থাপন করে লাইটনিং প্রটেকশন সিস্টেম বসানো। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে তালগাছ ও নারকেল গাছ লাগানো যেতে পারত।
আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প, বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়
বজ্রপাতে যেহেতু কৃষকদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে, এ কারণে ‘হাওরাঞ্চলে কৃষকদের জীবন সুরক্ষায় বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালে নেওয়া ২৩১ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় হাওরাঞ্চলের সাত জেলার ৫৮ উপজেলায় ১০০ থেকে ১২০ বর্গমিটার ব্যাসার্ধের ১৬টি ‘আর্লি স্টিমার ইমিটার (ইএসই)’ নামের বজ্রনিরোধক যন্ত্র বসানো হবে। পাশাপাশি ‘আর্থ নেটওয়ার্কস লাইটিং অ্যান্ড সিভিয়ার ওয়েদার আর্লি ওয়ার্নিং সল্যুশন’ সিস্টেমের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ, ভয়েস ও খুদে বার্তার মাধ্যমে স্থানীয়দের সতর্কবার্তা দেওয়া হবে। কিন্তু কৃষকদের কাছে এমন প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্র না থাকায় এর সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে।
অথচ একই প্রকল্প ২০১৭ সাল থেকে বাস্তবায়ন করে আলোর মুখ দেখেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। একই ধরনের প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয় ২৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে। এটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ দুটি প্রকল্প আমাদের সঙ্গে দ্বৈততা সৃষ্টি করেছে। কারণ, দুর্যোগের আগাম সতর্কতা, দুর্যোগ থেকে জনগণকে রক্ষা করা এবং পুনর্বাসনের সব কাজ দুর্যোগ মন্ত্রণালয় করে থাকে। অথচ দুটি মন্ত্রণালয় ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে না জানিয়েই প্রকল্প দুটি শুরু করেছে। ফলে একই উদ্দেশ্যে নেওয়া ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে
একইভাবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি রিডাকশন (রিভার)’ নামক প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের অধীন দেশের এক হাজার ৪০০টি স্থানে বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন করার কথা। এ প্রকল্পে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, প্রকল্পটি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ দুটি প্রকল্প আমাদের সঙ্গে দ্বৈততা সৃষ্টি করেছে। কারণ, দুর্যোগের আগাম সতর্কতা, দুর্যোগ থেকে জনগণকে রক্ষা করা এবং পুনর্বাসনের সব কাজ দুর্যোগ মন্ত্রণালয় করে থাকে। অথচ দুটি মন্ত্রণালয় ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে না জানিয়েই প্রকল্প দুটি শুরু করেছে। ফলে একই উদ্দেশ্যে নেওয়া ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু যাতে কম হয় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে, সব প্রকল্প এক জায়গা থেকে হলে বাস্তবায়ন করতে সুবিধা হতো।’
কোথায় বজ্রপাত বেশি হয়
বাংলাদেশের বজ্রপাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান। তিনি বলেন, বজ্রপাত বেশি হয় হাওর অধ্যুষিত জেলাগুলোতে। সেখানে মৃত্যুও বেশি হয়। প্রাক মৌসুম যেমন মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় হাওর অঞ্চলে। জেলাগুলো হলো- নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু যাতে কম হয় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে, সব প্রকল্প এক জায়গা থেকে হলে বাস্তবায়ন করতে সুবিধা হতো
‘পুরো মৌসুমে বজ্রপাত বেশি হয় সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, বরিশাল এবং উত্তরবঙ্গের রংপুর, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামে। মৌসুমের পর অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। শীতকালে সাতক্ষীরা, খুলনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে বেশি বজ্রপাত হয়।’
আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘কখন ও কোথায় বজ্রপাত হবে, এটা সেভাবে বলা যায় না। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য দুর্যোগ যেমন নির্দিষ্ট বিভাগ ও এলাকাজুড়ে হয়, বজ্রপাত তেমন নয়। আবহাওয়ার নানা ফ্যাক্টরের কারণে একেক অঞ্চলে একেক সময় বজ্রপাত কম-বেশি হয়।’