পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি কাটিয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছেন সাধারণ মানুষজন। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে এসে থামতেই হাজার হাজার মানুষ বের হয়ে যাচ্ছেন আপন ঠিকানার উদ্দেশ্যে। তবে এখনো ট্রেনযাত্রায় অনেকটা নির্ঝঞ্জাট এবং স্বস্তির সঙ্গেই ঢাকায় ফেরা যাচ্ছে বলেও জানান তারা। বিষয়টি নিয়ে বেশ সন্তোষও প্রকাশ করেন অনেকে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিনে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে শিডিউল অনুযায়ী একের পর এক ট্রেন এসে প্লাটফর্মে পৌঁছাচ্ছে। এসব ট্রেনে আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার পর ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা। পরিবার-পরিজন কিংবা অনেকে একাই ব্যাগপত্র নিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের হতে হাঁটছেন। এসব যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী। অফিস-আদালত খোলা হাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকা ফিরতে হয়েছে তাদের। তবে স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও দেরিতে খুলবে বিধায় অনেকেই পরিবার-পরিজন গ্রামের বাড়িতেই রেখে এসেছেন।
বেলা সাড়ে এগারোটায় কমলাপুরে এসে পৌঁছায় সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি।
এম. এ. মমিন নামের ওই ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, কিছুটা সময় বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া আর অন্য কোনো সমস্যা হয়নি। সিরাজগঞ্জ থেকে সকাল ছয়টায় এই ট্রেনটি ছেড়েছে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে কমলাপুর এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সাড়ে এগারোটায় এখানে পৌঁছাতে হয়েছে। তবে ট্রেনের ভেতরে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। টিকিট অনুযায়ী যার যার সিটে বসেই আসতে পেরেছি। আস্তে আস্তে মানুষের চাপ বাড়বে। এখনো ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যা কিছুটা কম হওয়ার কারণে অনেকটা স্বস্তির সঙ্গে ট্রেনযাত্রা সম্ভব হচ্ছে।
রবিউল হুসাইন নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আমি একাই ঢাকা ফিরেছি। বাচ্চাদের স্কুল আরো কয়েকদিন পরে খোলা। তাই তাদেরকে গ্রামের বাড়িতেই রেখে এসেছি। আরো কয়েকদিন সেখানেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। সামনের সপ্তাহে আমি গিয়ে আবার তাদের নিয়ে আসবো। আজ থেকে তো ব্যাংক খোলা হয়েছে। সেজন্য বাড়িতে থাকার ইচ্ছা থাকলেও চলে আসতে হয়েছে। তেমন ভিড়ে পড়তে হয়নি। তবে ঢাকায় ঢোকার পর যাত্রীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা তূর্ণা এক্সপ্রেসের যাত্রী হাসিনা বেগম বলেন, লেট হয়েছে কিন্তু তেমন ভিড় কিংবা ভোগান্তি হয়নি। তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফিরেছি যেন স্বস্তির সঙ্গে আসা যায়। ট্রেন পরিচালনায় সময়ের দিকে যদি কর্তৃপক্ষ নজর দেয় তবে খুব ভালো হয়। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার ঈদে বাড়ি যেতে এবং আসতে কষ্ট কম হয়েছে।
পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী আব্দুল ওয়াহাব বলেন, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় ট্রেনে উঠতে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছিল কিন্তু আসার সময় তেমনটি হয়নি। আবার আসার টিকিট কাটতেও তেমন ঝামেলায় পড়তে হয়নি।
অবশ্য দুটি ট্রেন ছাড়া প্রায় সবগুলো ট্রেনই যথাসময়ে কমলাপুরে এসে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা বারোটি ট্রেন এসে পৌঁছেছে। এরমধ্যে একতা ও বুড়িমারী এক্সপ্রেসের সময় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বাকি সবগুলো ট্রেনই যথাসময় এসে পৌঁছেছে। এখানে আসার পর সবাই যেন সুন্দরভাবে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারেন সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। যাত্রীদের সুন্দর ট্রেনযাত্রা উপহার দেওয়ার জন্য আমরা সকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছি।
অপরদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের ১৩ এপ্রিলের ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হয় ৩ এপ্রিল; ১৪ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয় ৪ এপ্রিল; ১৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয় ৫ এপ্রিল; ১৬ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয় ৬ এপ্রিল; ১৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয় ৭ এপ্রিল; ১৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয় ৮ এপ্রিল এবং ১৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয় ৯ এপ্রিল। এছাড়া যাত্রী সাধারণের অনুরোধে ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রা শুরুর ২ ঘণ্টা আগে থেকে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।