পুড়িয়ে মারা’র ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে ৩ দিন গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


ঈদের দিন সন্ধ্যায় নানা বাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এক স্কুলছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর বোনের দায়েরকৃত মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

রোববার (১৪ এপ্রিল) রাতে শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার হওয়া চার তরুণ হলেন দুদুল সরদার, তুষার মাঝি, শাকিব ও নাহিদ। গ্রেপ্তারকৃতদের বয়স ২০ থেকে ২১ বছর। এদের মধ্যে দুদুল সরদার ও তুষার মাঝি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন

ভুক্তভোগীর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের ওই কিশোরী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তার বাবা নেই। মা ও বোনদের সঙ্গে থাকে সে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নানার বাড়িতে যাওয়ার পথে তাকে চন্ডিপুর ভিআইপি মোড় এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় দুদুল সরদার ও তুষার মাঝি নামে দুই তরুণ। ভুক্তভোগী কিশোরীকে তুলে নিয়ে সুরেশ্বর দরবার শরীফের ভক্তদের থাকার একটি টিনের ঘরে আটকে রাখা হয়। কিশোরীকে আটকের পর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুদুল সরদার ও তুষার মাঝি। এরপর শনিবার সকালে তারা আরও তিন তরুণকে ডেকে আনে। ওই তিন তরুণও কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এরপর গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে একটি অটোরিকশায় উঠিয়ে দেয় অপহরণকারীরা।

বাড়ি ফিরে ভুক্তভোগী কিশোরী তার বোনদের কাছে ঘটনা খুলে বললে তারা তাকে নড়িয়া থানা পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। নড়িয়া থানা পুলিশ শনিবার রাতে ওই কিশোরীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আজ রোববার দুপুরে সদর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসক ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর বড় বোন বাদী হয়ে নড়িয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পাঁচ তরুণের নামে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযুক্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের দিন আমার নানা বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় দুদুল ও তুষার মাঝি আমাকে মুখ চেপে অটোরিকশায় করে সুরেশ্বর দরবার শরীফের পাশে একটি টিনের ঘরে নিয়ে আটকে রেখে জোর করে ধর্ষণ করে। আমার মুখ চেপে রাখে। তারা আমাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। দুদুল ও তুষার আমাকে ধর্ষণ করার পরে শনিবার সকালে আরও তিন জন এসে আমাকে আবার ধর্ষণ করে। আমাকে যে ঘরে আটকে রাখা হয়, সেই ঘরের বাইরে পাহারায় লোক ছিল। এরপর আমি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আমাকে একটি অটোরিকশায় উঠিয়ে দেয় তারা। পরে বাড়িতে গিয়ে আমি আমার বোনকে সব ঘটনা খুলে বলেছি। আমি ওদের বিচার চাই।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বোন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। আমার ছোট বোনটারে ওরা নির্যাতন করল। আমি ওদের এমন বিচার চাই, যেন আর কারও ওপর এমন নির্যাতন না হয়।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক কিশোরী। এমন একটি বিষয় নিয়ে পুলিশ ও ওই কিশোরীর স্বজনরা হাসপাতালে কিশোরীকে ভর্তি করিয়েছে। তাকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। ধর্ষণের বিষয়টি নিরক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে বিস্তারিত বলতে পারব।

বিষয়টি নিয়ে নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক কিশোরী। এমন অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুইজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *